মার্কিন মধ্যস্থতায় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধ হলেও থামেনি কথার যুদ্ধ। পাকিস্তানে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক পরিচালনার দাবি করলেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তবে, ক্ষয়ক্ষতি যুদ্ধের অংশ উল্লেখ করে পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ৫টি যুদ্ধবিমান ধ্বংসের কথা এড়িয়ে গেল ভারতের মিলিটারি অপারেশন্স। অন্যদিকে, অপারেশন বুনিয়ান উন মারসুস মাধ্যমে ভারতে ২৬টি সামরিক ও সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে হামলার দাবি ইসলামাবাদের।
যুদ্ধ বন্ধের একদিন পেরিয়ে গেলেও প্রায় ৪দিনের সংঘাত ইস্যুতে কথার যুদ্ধ এখনও থামেনি ভারত-পাকিস্তানের। একদিকে ভারত বলছে, পাকিস্তানের করাচী বন্দরেও আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল তাদের নৌ সেনারা। অন্যদিকে ভারতীয় যুদ্ধজাহাজকে সমুদ্রসীমা লঙ্ঘন করতে বাধা দেয়ার দাবি পাকিস্তানের নৌবাহিনীর। এমনকি যুদ্ধ বন্ধে পাকিস্তান অনুরোধ করেছে বলে মন্তব্য করছে নয়াদিল্লি। যা নাকোচ করেছে ইসলামাবাদ।
আরো পড়ুন:
নিজেদের সফলতার কথা তুলে ধরেছেন পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র ও সেনাবাহিনীর গণসংযোগ পরিদপ্তরের মহাপরিচালক। ১০ মে ভোর রাতে অপারেশন বুনিয়ান উন মারসুস এর মধ্য দিয়ে, সন্ত্রাসবাদ উস্কে দেয়া এবং বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলার সাথে জড়িত ভারতীয় ২৬টি সামরিক লক্ষ্যবস্তু ও সন্ত্রাসী স্থাপনায় পাল্টা হামলার দাবি করা হয়। এর আওতায় ছিল জম্মু- কাশ্মীর এবং ভারতের মূল ভূখণ্ডও। পাকিস্তানের সাথে সন্ত্রাসবাদের কোনও সম্পর্ক নেই বলেও জানান তিনি।
পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, ‘লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে ছিল সুরতগড়, সিরসা, ভুজ, নালিয়া, আধামপুর, ভাটিন্ডা, বার্নালা, হালওয়াদা, অবন্তীপুরা, শ্রীনগর, জম্মু, বিমান বাহিনী এবং বিমান ঘাঁটি। উধমপুর, মামুন, আম্বালা এবং পাঠানকোটেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বায়াস এবং নাগরোটায় ব্রহ্মোস স্টোরেজ সুবিধাও ধ্বংস করা হয়েছে, সেখান থেকেই পাকিস্তানের উপর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছিলো। নিরীহ বেসামরিক নাগরিক, আমাদের ফুলের মতো শিশু, নারী এবং আমাদের বৃদ্ধদের হত্যা করেছে।’
এছাড়াও পাকিস্তানের কোনও পাইলট ভারতে আটক নেই এবং ভারতীয় কোনো পাইলট পাকিস্তানে আটক নেই বলেও নিশ্চিত করেছেন পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে কাশ্মির সমস্যা বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু বলেও দাবি করেন তিনি।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতে ১৬০ কোটির বেশি মানুষের বিপদ হতে পারে। তাই বাস্তবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের কোনও স্থান নেই। যদি কেউ যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়, তবে সে আসলে পারস্পরিক ধ্বংসের ক্ষেত্র তৈরি করছে। সেই দিক বিবেচনায় এই সংঘাতে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পাকিস্তান মোকাবিলা করেছে।’
এদিকে ৭ মে রাতে পাকিস্তানে অপারেশন সিন্দুরের মধ্য দিয়ে ১০ মে যুদ্ধ বন্ধের আগ পর্যন্ত নিজেদের সফলতার দাবি নয়াদিল্লির। ভারতীয় বাহিনীর গর্জন সীমান্তবর্তী এলাকা ছাড়াও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সদরদপ্তর রাওয়ালপিন্ডি পর্যন্ত পৌঁছেছে বলে দাবি করে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
আরো পড়ুন:
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, ‘আমাদের বাহিনী পাকিস্তানে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক পরিচালনা করেছে। পুলওয়ামার পর, বালাকোটে বিমান হামলা চালানো হয়। পহেলগাম ঘটনার পর, বিশ্ব ভারতকে পাকিস্তানের গভীরে একাধিক হামলা চালাতে দেখছে। ব্রহ্মোস আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর শক্তির বার্তা। আমাদের শত্রুদের প্রতি প্রতিরোধের বার্তা। সীমান্ত রক্ষার জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতির বার্তা।’
প্রায় ৪দিনের সংঘাতে পাকিস্তানের ৩৫-৪০ জন সেনা এবং শতাধিক সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে বলে দাবি করছে ভারত। এছাড়া আক্রমণের সময় নিজেদের ৫ সৈন্য হারানোর দাবি নয়াদিল্লির। এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানান দেশটির মিলিটারি অপারেশন্সের মহাপরিচালক লেফটেনেন্ট জেনারেল রাজিভ ঘাই।
তবে, পাকিস্তানের প্রতিরোধে তিনটি রাফালসহ পাঁচটি যুদ্ধবিমান ধ্বংসের বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তা এড়িয়ে যান তিনি। স্পষ্ট কোনো তথ্য না দিয়ে, ক্ষয়ক্ষতি যুদ্ধের অংশ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ভারতের মিলিটারি অপারেশন্সের মহাপরিচালক লেফটেনেন্ট জেনারেল রাজিভ ঘাই বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণরেখায় কামান ও ছোট অস্ত্রের গুলিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ জন সদস্য নিহত হয়েছে। তাদের বিমানগুলোকে আমাদের সীমান্তের ভেতরে আসতে বাধা দেয়া হয়েছিল, তাই আমাদের কাছে ধ্বংসাবশেষ নেই। তবে অবশ্যই আমরা কয়েকটি বিমান ভূপাতিত করেছি।’
আপাতত কোনো সংঘাতের শঙ্কা না থাকায় সোমবার থেকে পুনরায় চালু হয়েছে পাকিস্তানের পাঞ্জাবের স্কুলগুলো।