প্রায় এক মাস আগে সৌদি আরবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কিংবা মিত্র দেশগুলোর ওপর হুমকি বা পরমাণু হামলা সহ্য করা হবে না।’
সেই সময়ের হুমকিকে বেশ ফলাও করেই প্রচার করেছিল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বিশ্লেষণ বলছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প জানতেন ইরানে হামলা হবেই।
রয়টার্স বলছে, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ইরানের পরমাণু প্রকল্পে হামলার দীর্ঘদিনের পরিকল্পনাকে বাস্তব রূপ দিতে ইসরাইলে সমরাস্ত্র পাঠাতে শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন সূত্রের বরাত দিয়ে দাবি করা হয়, সেসময় থেকে যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনের পথে থাকা হাজার হাজার সমরাস্ত্রের গতিপথ বদলে গেছে। যদিও এই বিষয়ে মুখ খোলেনি পেন্টাগন।
রয়টার্স বলছে, গেলো কয়েক সপ্তাহে ইরানের বিষয়ে ট্রাম্পের বেফাঁস সব মন্তব্যই জানান দিয়েছে, প্রস্তুতি চলছিল গোপনে। যুদ্ধ শুরুর পর ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন আটকে গেছেন কূটনীতি আর সামরিক সহায়তার বিপরীতমুখী চক্রে।
কারণ এমন এক মিত্র দেশের জন্য তিনি কাজ করছেন, যেই দেশের প্রশাসন পুরোপুরি তার অনুগত নয়।
কূটনীতিকরা বলছেন, সাত দিনের যুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্প পড়ে গেছেন উভয় সংকটে। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সামনে এখন অনেকগুলো পথ খোলা। তিনি ইরান-ইসরাইলের মধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে পারেন অথবা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে দিতে পারেন।
এমনকি বিমান হামলার মধ্য দিয়ে যুদ্ধে অনুপ্রবেশ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছেনা। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বে শান্তির বার্তা নিয়ে ক্ষমতায় আসা ডোনাল্ড ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত হয়তো ইসরাইলের জন্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারেন ইরানের বিপক্ষে।
ইউরোপীয় কাউন্সিলের বিদেশি সম্পর্ক বিভাগ বলছে, কোনোভাবে যদি ইরানে হামলা করে বসে যুক্তরাষ্ট্র, খুলে যাবে প্যান্ডোরা বক্স। কূটনীতির বাইরে গিয়ে যদি ট্রাম্প যুদ্ধকে বেছে নেন, প্রেসিডেন্সির বাকি মেয়াদও পড়ে যেতে পারে ঝুঁকির মুখে।
কারণ ইরানের কাছে আত্মসমর্পণ কোনো সমাধানের মধ্যে পড়ে না। সামরিকভাবে জিততে পারাও তেহরানের পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু ইরান সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছে, যেন এখানে কোনো পক্ষই বিজয়ী না হতে পারে।
অনেকেই বলছেন, ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনা ফোর্দো পরমাণু কেন্দ্রে হামলা করে বসতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ এই সক্ষমতা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের নেই। বিশ্লেষকদের বরাতে সংবাদ মাধ্যম সিএনএন’র বিশ্লেষণ বলছে, কোনোভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি ইসরাইলের পক্ষ নিয়ে ইরানে হামলা করে বসে, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সব ঘাঁটিতে ইরান একযোগে হামলা চালাবে। এর মধ্য দিয়ে পুরোদমে শুরু হবে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান যুদ্ধ।
তেহরান এই যুদ্ধে সহজে জিততে না পারলেও ওয়াশিংটনের জন্যও এই যুদ্ধ জেতা কঠিন হবে। কারণ ইরানের মতো বড় বড় দেশে হামলা চালাতে বেশ বেগ পেতে হবে মার্কিন সেনাবাহিনীকে।
এই যুদ্ধের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে কোনো সমর্থনও আসবে না। এক্ষেত্রে নিজের প্রেসিডেন্সিকে হুমকির মুখে না ফেলে এই যুদ্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়াই ট্রাম্পের জন্য মঙ্গলজনক হবে বলে মত কূটনীতিকদের।