প্রায় দুই সপ্তাহ পর সাইরেন বা বিস্ফোরণের শব্দ ছাড়া ঘুম ভেঙেছে ইরান ও ইসরাইলি নাগরিকদের। ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর আপাতত সংঘাত অবসানের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
তবে এই ১২ দিনের সংঘাতে কার জয় হয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক থামছেই না। ইসরাইল বলছে তারা যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়েছে। অন্যদিকে ইরানের দাবি, ইসরাইলকে যুদ্ধবিরতিতে আসতে বাধ্য করেছে তেহরান। ইরান সফলভাবে তার কাজ শেষ করেছে বলছেন- দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান।
তেহরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে ইসরাইলি হামলায় ইরানে প্রাণ হারিয়েছে ৬১০ জন এবং আহত প্রায় ৫ হাজার মানুষ। অন্যদিকে, ইরানের ৫ শতাধিক মিসাইল ও হাজারের বেশি ড্রোন হামলায় প্রাণ গেছে ২৮ জন ইসরাইলির। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতাধিক বাড়িঘর ও অবকাঠামো।
১২ দিনের সংঘাতে ইরানের অন্তত ১৪ বিজ্ঞানীকে হত্যার দাবি করেছে ইসরাইল। যাদের মধ্যে রসায়নবিদ, পদার্থবিদ এবং বেশ কয়েকজন প্রকৌশলীও আছেন। ইসরাইল বলছে, এর ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বহু বছর পিছিয়ে গেছে। এটিই ইসরাইলের বড় সাফল্য।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড কর্পসের মুখপাত্র জানান, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে হামলা করার হুমকি দিচ্ছে ইসরাইল। যেকোনো সময় হামলা হতে পারে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।
আইআরজিসির মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইব্রাহিম জোলফাগারি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইহুদিবাদী সরকারকে ইরান তাদের সক্ষমতা বুঝিয়ে দিয়েছে। আল উদেইদে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার চালিয়ে তাদের সতর্ক করা হয়েছে। এটি থেকে ইরানের বিষয়ে তাদের শিক্ষা নেয়া উচিত। তা না হলে পরবর্তীতে আরও শক্তিশালী কঠোর প্রতিক্রিয়ার জানাবে তেহরান।’
এদিকে, যুদ্ধবিরতির পর ইরানের বিপ্লবী গার্ডের সমর্থনে ফের তেহরানে সমাবেশ হয়েছে। এ ছাড়া ইরাকের বসরায় ইরানের পতাকা হাতে সমাবেশ করেছে শত শত মানুষ।
সমাবেশে যোগ দেয়া ইরানিয়ানদের মধ্যে একজন জানান, যুদ্ধবিরতির নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না এবং ইহুদি শাসনব্যবস্থার সম্পূর্ণ ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত এ লড়াই চলবে।
আরেকজন জানান, সংঘাত শুরু করেছে ইসরাইল। তবে এর অবসান ঘটাবে ইরান এবং প্রয়োজনে দেশ রক্ষায় তারা জীবন দিতেও প্রস্তুত।
আরেকজন বলেন, ‘গাজা ও লেবাননে যা ঘটেছে তা ইরানের পুনরাবৃত্তি হতে দেয়া যাবে না। ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র, ট্রাম্প কারও উপরই ভরসা নেই।’
যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের প্রতিশোধ ইরান অবশ্যই নেবে উল্লেখ করে আরেকজন বলেন, ‘ইসরাইলের বাঁচার কোনো পথ নেই।’
যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর ইরান ও ইসরাইলের পরিবেশ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ইসরাইলের বেন গুরিওন বিমানবন্দরে কার্যক্রম চালু হয়েছে। খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ইসরাইলে মার্কিন দূতাবাসের সব ধরনের বিধিনিষেধও তুলে নেয়া হয়েছে।
এদিকে ইরানের জনজীবনও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে। খুলতে শুরু করেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট। ইসরাইলের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ৭ শতাধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করে ইরান। এর মধ্যে আজ (বুধবার, ২৫ জুন) তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
ইরান ও ইসরাইল যুদ্ধবিরতি কতদিন বজায় রাখতে পারবে তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। কার্যকর ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে চীন। এদিকে, গেল সোমবারের (২৩ জুন) হামলার জন্য কাতারের আমিরের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট।
এ ছাড়া, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গেও ফোনালাপে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার আশ্বাস দিয়েছেন ইরানি প্রেসিডেন্ট।