বিশ্বের কোথাও দাবদাহ তো কোথাও বৃষ্টি-বন্যা-ভূমিধস

ফ্রান্সে ঝড়বৃষ্টি, যুক্তরাষ্ট্রে দাবদাহ, ভারতে ভূমিধস
বিদেশে এখন
0

আবহাওয়ার বিরূপ খেয়ালের শিকার সারা পৃথিবী। এশিয়া থেকে ইউরোপ, কিংবা সুদূর আমেরিকা। স্বস্তি নেই কোথাও। একদিকে তীব্র গরম, দাবদাহ, দাবানল। অন্যদিকে ঝড়বৃষ্টি-বন্যা আর ভূমিধসে নাকাল বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ।

সিটি অব লাভ, বৃষ্টিতে নির্মল সৌন্দর্য হয়তো একটি কারণ, যে জন্য ভালোবাসার শহর বলে সুখ্যাতি রয়েছে প্যারিসের। তবে ঝড়বৃষ্টির শেষে মানুষের ভোগান্তি ছাড়ায় সব সীমা।

ভারি বৃষ্টি, ঝড়ো বাতাস, অর্ধশত শেকড় ওপড়ানো গাছপালা আর ফ্রান্সজুড়ে এক লাখের বেশি বাড়িঘরে বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ। হয়েছে প্রাণহানিও।

অন্যদিকে বাড়ন্ত দাবানলের কবলে ইউরোপের আরেক দেশ গ্রিস। তাপমাত্রার পারদ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছানোয় দাবদাহের তীব্রতা কেবলই বাড়ছে। রাজধানী এথেন্সের কাছেই উপকূলীয় একটি শহর পুড়ে ছাই। ১২টি বিমান আর ১২টি হেলিকপ্টার নিয়ে ১৩০ জন দমকল কর্মী মিলেও নেভাতে পারেনি আগুন। দাবানলের আরও একটি কঠিন মৌসুমের প্রস্তুতি হিসেবে চলতি বছর কর্মীসংখ্যা বাড়িয়ে রেকর্ড ১৮ হাজার করেছে গ্রিক ফায়ারসার্ভিস।

গ্রীষ্মের শুরুতেই গরমে নাভিশ্বাস উঠছে ইউরোপের বলকান অঞ্চলের মানুষের। সার্বিয়ায় ইতিহাসের উষ্ণতম দিন ছিল গত বুধবার (২৫ জুন), সামনের দিনগুলোতে তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস। মন্টেনিগ্রোতে পর্যটকরা তীব্র গরমে অ্যাড্রিয়াটিক সৈকত ছেড়ে ছুটে যাচ্ছেন উত্তরের দুর্মিতর পাহাড়ে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দেড় হাজার মিটার উঁচুতে। বসনিয়া-ক্রোয়েশিয়া-নর্থ মেসিডোনিয়াতেও ফোস্কা পড়া গরম।

পর্যটকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমরা কাতালুনিয়া থেকে দুর্মিতরে এসেছি। কারণ স্পেনে, বিশেষ করে বার্সেলোনায় অনেক গরম।’

অন্য একজন বলেন, ‘সকালে যত দ্রুত সম্ভব সব কাজ সেরে ফেলার চেষ্টা করি যেন ছায়া পাই। এরপর স্ত্রীকে নিয়ে পাহাড়ে চলে যাই। গরমে পাহাড় সেরা, নিয়মিত যাই।’

সুদূর রাশিয়ায় বৈকাল হ্রদ আর মঙ্গোলিয়া সীমান্তেও দাবানলে হাতছানি। পুড়ে ছাই হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার একর এলাকা। তীব্র বাতাসের মধ্যেই আগুন নেভানোর চেষ্টায় আড়াইশ’ ফায়ারসার্ভিস কর্মী।

অন্যদিকে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় হিমাচল প্রদেশে আবার আবহাওয়ার ভিন্ন রূপ। অতিবৃষ্টি আর আকস্মিক বন্যায় বিপর্যস্ত জনজীবন। নদীর তীরবর্তী বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, ঘটেছে প্রাণহানি। নিখোঁজ অনেকেই স্রোতে ভেসে গেছে বলে শঙ্কা।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘যারা মারা গেছে, তারা পালানোর জায়গা পায়নি। এখনই নদীতে এত উঁচুতে পানি বইছে। ওই সময় তো দৌড়ে পালানোর সুযোগই ছিল না। দুপাশেই গিরিখাদ।’

ভারতের হিমাচল প্রদেশ প্রধান সুখভিন্দর সিং সুখু বলেন, ‘নয়টি এলাকায় হড়পা বান হয়েছে। নদীর তীর থেকে দু'জন নিখোঁজ হয়েছে। বড় পাহাড় এলাকায় আকস্মিক ঢলের পর তিনজনের মরদেহের সন্ধান মিলেছে।’

পৃথিবীর আরেক প্রান্তের এ দৃশ্য দেখে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি কোনো ভিডিও বলে মনে হলেও আদতে এ অবস্থা দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার। ভেঙে পড়েছে সেতু। তীব্র বৃষ্টি, বন্যা আর ভূমিধসে নাকাল পাঁচ প্রদেশ।

আবহাওয়ার বিরূপ খেয়ালের শিকার যুক্তরাষ্ট্র। একদিকে ফ্লোরিডায় তীব্র ঝড়বৃষ্টি; অন্যদিকে টানা তৃতীয় দিনের মতো নিউইয়র্কে তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বস্তি খুঁজছেন অ্যাস্টোরিয়া, কুইন্সের বাসিন্দারা।

বসবাসকারীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘বেশ খারাপ গরম পড়েছে। প্রথমে বৃষ্টি হলো। এরপরই থেকেই গরম।’

গ্রীষ্মের প্রথম সপ্তাহেই ছয় দশকের রেকর্ড সর্বোচ্চ তাপমাত্রার কবলে নিউইয়র্ক। তীব্র গরমে বিপর্যস্ত মধ্যপশ্চিম থেকে শুরু করে পূর্ব উপকূল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩০টি অঙ্গরাজ্য। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন শত শত মানুষ।

এসএস