ইরানের পরমাণু স্থাপনায় আলাদা আলাদা হামলার দু'সপ্তাহ পর হোয়াইট হাউজে দুই বন্ধুর পুনর্মিলন। ট্রাম্প-নেতানিয়াহু'র এই সাক্ষাৎ এবং দুই রাষ্ট্রপ্রধানের আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের আগ্রহ তুঙ্গে।
প্রশ্ন উঠছে মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত- যাকে ট্র্যাজেডি বলছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট- সেই অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ গড়াচ্ছে কোন দিকে? আর ১২ দিনের সংঘাতের পর ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সমাধান নাকি আবারও রক্তপাত- কী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন এই দুই রাষ্ট্রপ্রধান?
মার্কিন বার্তা সংস্থা সিএনএন বলছে, পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি নয় বরং হামাসের কাছে আটক বাকি জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে ট্রাম্প-নেতানিয়াহু'র সবশেষ বৈঠকে। সিএনএন আরও নিশ্চিত করেছে, দুই নেতার বৈঠক আরও ইঙ্গিত করছে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ইস্যুতেও কূটনৈতিক সমাধানের পথে হাঁটতে চায় ওয়াশিংটন।
ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় দফা সফর, আলোচনা ও সিদ্ধান্ত- এই সবকিছুকে মধ্যপ্রাচ্য সংকট সমাধানের নতুন মোমেন্টাম হিসেবে দেখছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
সিএনএন আরও বলছে, নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর বাইডেন প্রশাসনের মতো আবারও হামাসের সঙ্গে বন্দি ও জিম্মি বিনিময় এবং সাময়িক অস্ত্রবিরতির সমাধানে গুরুত্ব দিচ্ছেন ট্রাম্প। বিশ্লেষকরা মনে করেন, শর্ত মেনে হামাস ধাপে ধাপে সব জিম্মিদের মুক্তি দিলে একপর্যায়ে যুদ্ধ বন্ধ করতে খোদ নেতানিয়াহুকেই চাপ দিতে পারবেন ট্রাম্প।
এবং সেখানে কোনভাবেই নমনীয় আচরণ করবে না ওয়াশিংটন। বিপরীতে নেতৃত্ব সংকটে ভোগা হামাসকে চাপে রাখতে ব্যবহার করবেন কাতারের আমিরকে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দু'পক্ষকে সমঝোতায় বাধ্য করা- ট্রাম্পের নয়া এজেন্ডা হতে যাচ্ছে- দাবি করছে সিনএনএনও।
ইসরাইলের সাবেক সংসদ সদস্য মাইকেল ওরেন বলেন, ‘ইসরাইলি সেনারা যতদিন গাজায় অভিযান বন্ধ না করবে সৌদি আরব কখনওই ইসরাইলের সঙ্গে সমঝোতা করবে না। এবং, মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই সংঘাত থামাতে চান। তিনি ইসরাইলের সঙ্গে লেবাননের শান্তি চুক্তি চান। সিরিয়ার সঙ্গেও ইসরাইলের বিরোধ মেটাতে চান। ফলে, হামাস যদি শর্তে রাজি হয়, ট্রাম্প নেতানিয়াহুকেও চাপ দিতে পারবেন।’
এদিকে, এ বৈঠকের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা ইরানের পরমাণু কর্মসূচী। বিশ্লেষকরা বলছেন, তেহরানের সঙ্গে সংঘাতে জড়ানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল দুই দেশই নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করলেও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে পৌঁছাতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন। কারণ ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে- এমন দাবি উঠলেও প্রমাণ দেখাতে পারেনি কোনো পক্ষই।
বরং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার বিতর্কিত প্রতিবেদন ও বক্তব্যের পর ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা করে তেহরানকে এক প্রকার পরমাণু অস্ত্র তৈরির লাইসেন্স দিয়ে ফেলেছেন ট্রাম্প-নেতানিয়াহু- বলছেন বিশ্লেষকরা।
আবার পশ্চিমাদের সঙ্গে বিরোধ জিইয়ে রেখে নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি নিয়ে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারবে না ইরান। এর সঙ্গে আছে ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ঝুঁকিও। তবে, কূটনৈতিকভাবে সমস্যা সমাধানে বরাবরই চৌকশ দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। সিএনএনের প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে, যেখানে পরমাণু সমৃদ্ধকরণ ইস্যুতে একটি চুক্তিতে পৌঁছালে তেহরান-ওয়াশিংটন দুই পক্ষের লাভ, সেখানে সমঝোতার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।
বিশ্লেষকদের দাবি, প্রথমে জিম্মিদের ফিরিয়ে এনে গাজা যুদ্ধের স্থায়ী কোনো সমাধান ও পরবর্তীতে ইরানের সঙ্গে পরমাণু ইস্যুতে একটি সমঝোতা- অনাগত সময়ে এই দুই এজেন্ডা বাস্তবায়নকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন ট্রাম্প। ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই নয়া মোমেন্টামকে অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই নেতানিয়াহুরও।