টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া এই হামলা অব্যাহত ছিল বৃহস্পতিবার সূর্যোদয় পর্যন্ত। কিয়েভের আকাশে দেখা যায় দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং মস্কোর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের লড়াই। যদিও হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন ইউক্রেনীয়। হামলা থেকে বাঁচতে অনেকেই আশ্রয় নেন ভূগর্ভস্থ মেট্রো স্টেশনে।
এর আগে বুধবার ইউক্রেনকে আর্টিলারি শেল ও মোবাইল রকেট আর্টিলারি মিসাইল সরবরাহ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। ২ মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রয়টার্স। যদিও অস্ত্র সরবরাহের পরিমাণ নিশ্চিত করা হয়নি। রাশিয়ার হামলার প্রেক্ষিতে ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি তাদের প্যাট্রিয়ট পাঠাতে চাই। তারা আমাদের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছে। তবে মিসাইলের সংকট রয়েছে। কারণ অনেক মিসাইল আমরা ইউক্রেনে পাঠিয়েছি। যেহেতু তারা আবেদন করেছে, বিষয়টি আমরা বিবেচনা করবো।’
এদিকে মিত্রদের সমর্থন অর্জনের লক্ষ্যে ইতালিতে অবস্থান করছেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। রোম কনফারেন্সের আগে ইতালির প্রেসিডেন্ট ও মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূতের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন পোপ লিওর সঙ্গে। এসময় সংঘাত নিরসনে কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে বৈঠক আয়োজনে ভ্যাটিকান প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন পোপ।
এদিকে জার্মান চ্যান্সেলর জানান, কনফারেন্সে ইউক্রেনকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহের প্রস্তাব দিবে তার দেশ। অন্যদিকে ন্যাটো মহাসচিবের দাবি, ইউরোপকে রাশিয়া যুদ্ধে ব্যস্ত রাখছে, এ সুযোগে তাইওয়ান দখলের অভিযান চালাতে পারে চীন।
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্যে জানতে পেরেছি, তাইওয়ানে হামলা চালানোর আগে ভ্লাদিমির পুতিনকে জানাবেন শি জিনপিং। তিনি চাইবেন রাশিয়া ইউরোপকে যুদ্ধে ব্যস্ত রাখুক। তাই ট্রান্স আটলান্টিক ও ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চল একে অপরের সঙ্গে জড়িত।’
জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মার্জ বলেন, ‘অস্ত্র সরবরাহ শুরুর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। ইউক্রেনের জন্য এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। আমরা এ বিষয়ে ইউক্রেনকে প্রস্তাব দিতে যাচ্ছি। জার্মানি ইউক্রেনকে সর্বাত্মক সহায়তা করবে।’
ইউক্রেন নিয়ে আলোচনায় পুতিনকে নিয়ে ট্রাম্পের সমালোচনার পরেও শান্ত রয়েছে মস্কো। ক্রেমলিনের মুখপাত্রের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে রাশিয়া। বাস্তবতা মেনে নিয়ে অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে কিয়েভের প্রস্তাব উত্থাপন করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে স্থলমাইন ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ বলেন, ‘তৃতীয় দফা শান্তি আলোচনার জন্য ইউক্রেনের প্রস্তাবের অপেক্ষা করছে রাশিয়া। ইউক্রেনকে এ বিষয়ে আরও চিন্তা করা প্রয়োজন। কারণ যুদ্ধের পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। আমরা প্রতি মুহূর্তে সফলতা অর্জন করছি। ইউক্রেনকে বাস্তবতা মেনে প্রস্তাব দেয়া উচিত।’
২০১৪ সালে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান এমএইচ-১৭ ভূপাতিতের অভিযোগে রাশিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন ইউরোপিয়ার কোর্ট অফ হিউম্যান রাইটস। তবে ২৯৮ আরোহীর বিমান ভূপাতিত করার কথা অস্বীকার করে আসছে মস্কো।