তিন বছর পর আরও বেশি তীব্র হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন দিয়ে সম্প্রতি ইউক্রেনের সামরিক শিল্প স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করছে রাশিয়া। বিপরীতে রাশিয়ার যুদ্ধবিমান তৈরির কারখানা এবং ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালানোর দাবি ইউক্রেনের।
এরমধ্যেই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উপেক্ষা করে অভিযান জোরালো করায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপর ক্ষিপ্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুদ্ধের ময়দানে তার আঁচও লাগতে শুরু করেছে। গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রের চালান সামাজিকভাবে স্থগিত রাখার পর এবার কিয়েভকে অস্ত্র দিতে উঠে পরে লেগেছে ওয়াশিংটন। এরই মধ্যে ইউক্রেনের জন্য ৫০ কোটি ডলারের নিরাপত্তা সহায়তার অনুমোদনও দিয়েছে মার্কিন সিনেট। এতে লড়াইয়ের ময়দানে আবারও চাঙা হচ্ছে ইউক্রেন।
এমন উত্তেজনার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এনবিসি নিউজকে জানিয়েছেন, ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সঙ্গে চুক্তি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। এর অধীনে ন্যাটোর মাধ্যমে ওয়াশিংটনের দেয়া প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাবে কিয়েভ।
এদিকে রুশ অভিযান মোকাবিলায় ইউরোপে ন্যাটোর দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন একজন শীর্ষ মার্কিন জেনারেল।
ইউক্রেন যুদ্ধের অভিজ্ঞতা এই অস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট করেছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। এছাড়া, চলমান যুদ্ধে অটল সমর্থনের অংশ হিসেবে ইউক্রেন পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ইউরো সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এরপর রোমে হওয়া ইউক্রেন পুনরুদ্ধার সম্মেলনে দেশটির এই দুর্দশার সময় সমর্থন আরও জোরালো করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএময়ের প্রধান।
আইওএময়ের মহাপরিচালক অ্যামি পোপ বলেন, ‘যুদ্ধের সাড়ে তিন বছর হয়ে গেছে। আমার মনে হয় সবাই ক্লান্ত। আমরা ইউক্রেনীয়দের কাছ থেকেও শুনেছি, যারা আক্রমণের সম্মুখীন হচ্ছেন। অনেকে একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত শান্তি ছাড়া উপায় নেই। কেবল তহবিলের অনুরোধই নয়, ইউক্রেনীয় জনগণের প্রতি সমর্থনও জোরালো করতে হবে।’
এ পরিস্থিতিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে রাশিয়াও। শুক্রবার উত্তর কোরিয়ায় গেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে রাশিয়ায় নতুন করে আরও ২৫ থেকে ৩০ হাজার সেনা পাঠাতে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। ইউক্রেনের গোয়েন্দা তথ্যের মধ্যে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পিয়ংইয়ং সফরে যুদ্ধ উত্তেজনা আরও বাড়ার শঙ্কা প্রকট হচ্ছে। এর আগে ১০ হাজারের এরও বেশি সৈন্য পাঠিয়েছিল উত্তর কোরিয়া।
এ অবস্থায় রাশিয়া নিয়ে আগামী সোমবার গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেয়ার কথা রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের। তবে কী নিয়ে ঘোষণা দেবেন তা স্পষ্ট করেননি তিনি। এরমধ্যে পুতিনের ওপর নাখোশ হওয়ার কথাও জানিয়েছেন ট্রাম্প।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এতদিনের যুদ্ধে মাসের দিক বিবেচনায় ইউক্রেনে সর্বোচ্চ বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে গত জুন মাসে। ওই মাসে ২৩২ জন ইউক্রেনীয় নিহত এবং ১ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।