মার্কিন প্রেসিডেন্টের শুল্কনীতির কারণে যখন বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ যখন কূটনৈতিক সমাধান, সমঝোতা এমনকি রপ্তানিখাত সচলের স্বার্থে সুর নরমের পথে হাঁটছে- তখন চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন জাগাচ্ছে আশার আলো।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটির দাবি, গেল এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত চীনের জিডিপির হার বেড়েছে ১ দশমিক ১ শতাংশ হারে। এমনকি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রথম প্রান্তিকে এই প্রবৃদ্ধি বাড়ার হার ছিল ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। বিবিসি বলছে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে ক্ষুদ্র অথচ লাভজনক নীতি বাস্তবায়নে জোর দেয়ায় বেইজিং তার লক্ষ্যপূরণে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি, জিডিপির এই হার বজায় থাকলে ২০২৫ সালে নিজেদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কোনো বেগ পেতে হবে না চীনকে- বলছে কাতার ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আল জাজিরা।
এমনি ট্রাম্পের চড়া আমদানি শুল্ক দমাতে পারেনি রপ্তানি খাতে চীনের সাফল্যকে। উল্টো ওয়াশিংটনের চড়া শুল্কের কারণে অন্যান্য দেশে কম শুল্কে বা শুল্ক ছাড়াই পণ্য রপ্তানি বাড়িয়েছে বেইজিং। চীনা কাস্টম অফিস বলছে, গেল জুন থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত চীনা পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ পর্যন্ত।
চীন সাধারণ শুল্ক বিভাগের উপপ্রধান ওয়াং লিংজুন বলেন, 'বিশ্ববাণিজ্যে নানাবিধ জটিলতা ও চ্যালেঞ্জ বাড়লেও চীন বৈদেশিক বাণিজ্যখাতে সাফল্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। শেষ ৯টি প্রান্তিকে চীনের মোট আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ১.৩৯ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি। চলতি বছরের প্রথমার্ধে দেশটির আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬০০ বিলিয়ন ইউয়ানের বেশি।'
চীনা সরকারের তথ্য বলছে, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে লক্ষ্য পূরণের পেছনে আছে উৎপাদন খাত ৬ দশমিক ৪ শতাংশ পর্যন্ত সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত। ব্যাপক চাহিদা থাকায় থ্রিডি প্রিন্টার, বৈদ্যুতিক যানবাহন ও শিল্পখাতে কাজে লাগানো যায় এমন রোবট বাজারজাত করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উন্নত করেছে বেইজিং- এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসি। প্রতিবেদনে আরও বলা হচ্ছে, গণপরিবহন, বাণিজ্য ও প্রযুক্তিখাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সমানে সমান টেক্কা দিচ্ছে বেইজিং।
যদিও এই সাফল্যের মধ্যে খুচরা বাজার ও আবাসন খাতে ধাক্কা খেয়েছে চীন। গেল জুনের তুলনায় চলতি জুনে খুচরা পণ্যের বিক্রি কমেছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। পাশাপাশি চীনে কমেছে বাড়ির দামও। বিবিসি বলছে, গেল ৮ মাসে দেশটিতে নতুন বাড়ির দরপতনের পরিসংখ্যান ছাড়িয়েছে অতীতের রেকর্ড।
এর আগে চলতি বছরের শুরুতে চীনা পণ্যে ১৪৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। মে মাসে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা হলে এই চড়া শুল্ক বাতিল করে ৯০ দিনের জন্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছায় ওয়াশিংটন ও বেইজিং।
যেখানে চীনা পণ্যে সর্বনিম্ন ৩০ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসায় যুক্তরাষ্ট্র, বিপরীতে মার্কিন পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক বসানোর শর্তে রাজি হয় বেইজিং। শর্ত অনুযায়ী, আগামী ১২ আগস্টের মধ্যে শুল্ক ইস্যুতে চুক্তি নবায়ন বা নতুন চুক্তি করতে হবে দুই দেশকে।