দুর্ভিক্ষপীড়িত গাজার শিশুদের এই চিত্র দেখলে যেকোনো বিবেকসম্পন্ন মানুষের শরীর শিউরে উঠতে বাধ্য। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, গণমাধ্যমে এই সকল চিত্র প্রকাশ করাও সম্ভব হচ্ছে না। খাদ্যের অভাবে শীর্ণকায় দেহের শিশুগুলোর প্রাণ ঝরছে প্রতিনিয়ত। শুধু মঙ্গলবারেই অনাহার ও অপুষ্টিতে ৬ সপ্তাহের শিশুসহ প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ ফিলিস্তিনি। যুদ্ধ শুরুর পর এই সংখ্যা ছাড়িয়েছে শতকের ঘর।
বাসিন্দারা বলেন, শিশুর বয়স মাত্র ৪০ দিন ছিল। তার মায়ের অপুষ্টি ছিল। খাদ্যের অভাবে শিশুটিও অপুষ্টিতে মারা গেছে। আমাদের এখানে ভর্তি হওয়া বেশিরভাগই পানিশূন্যতা ও অপুষ্টিতে ভুগছে। উপত্যকার প্রতিটি প্রান্তে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে।
খাদ্য সংকট এতটাই প্রকট যে সহায়তা সংস্থাগুলোর কর্মীদের অনাহারে দিন পার করতে হচ্ছে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্বের শতাধিক এনজিও। জাতিসংঘ মহাসচিবের দাবি, উপত্যকার প্রতিটি দরজায় কড়া নাড়ছে দুর্ভিক্ষ। ত্রাণ সরবরাহে ইসরাইলের অবরোধ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। ত্রাণ সরবরাহ স্বাভাবিক না করলে ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইইউর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের কারণে মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞের পরিস্থিতি ভয়াবহ। অপুষ্টি বাড়ছে। প্রতিটি দরজায় দুর্ভিক্ষ কড়া নাড়ছে। আমরা এখন মানবিক বিপর্যয়ের শেষ ধাপ দেখছি।’
ইউএনআরডব্লিউএ যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক জুলিয়েট তৌমা বলেন, ‘পৃথিবীর মধ্যে এক টুকরো নরক গাজা। উপত্যকার কেউ নিস্তার পাচ্ছেন না। গাজায় মানবিক সহায়তা কর্মীদের সাহায্য প্রয়োজন। ডাক্তার, নার্স, সাংবাদিক, ইউএনআরডব্লিউএ কর্মী সবাই ক্ষুধার্ত।’
খাদ্যের পাশাপাশি বুলেটকেও অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। মঙ্গলবার দিনভর হামলায় উপত্যকায় প্রাণ হারিয়েছেন অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি। যার মধ্যে ত্রাণ প্রত্যাশী ছিলেন এক-তৃতীয়াংশ মানুষ। মধ্যাঞ্চলীয় শহর দেইর আল বালাহতে চলছে স্থল অভিযান। প্রাণ বাঁচাতে এলাকা ছাড়ছেন ফিলিস্তিনিরা। ইসরাইলি সেনাদের হাতে আটক কর্মীদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অন্যদিকে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারের দাবি, এমন পদক্ষেপে আরও অবনতি হবে উপত্যকার মানবিক পরিস্থিতি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, ‘দেইর আর বালাহতে হামলা জোরদারের পাশাপাশি বাসিন্দাদের এলাকা ত্যাগের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। দুঃস্বপ্ন আর খারাপ হবে না মনে করা হলেও প্রতিমুহূর্তেই আরও খারাপ হচ্ছে।’
যুদ্ধ বন্ধে ঢিমেতালে চলছে কূটনীতি। আল জাজিরার প্রতিবেদন বলছে, রোমে ইসরাইলের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। যেখানে প্রাধান্য পাবে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও মানবিক করিডোর তৈরির প্রসঙ্গ।
এদিকে গণহত্যা বন্ধে নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে ইসরাইলিরা। এসময় বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল গাজায় অপুষ্টিতে প্রাণ হারানো শিশুদের প্ল্যাকার্ড। ত্রাণ প্রত্যাশীদের অবর্ণনীয় কষ্ট তুলে ধরতে প্রতীকীভাবে কাঁধে বহন করা হয় সহায়তার বস্তা। বিক্ষোভ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কেও। এসময় অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের চাপ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।