একদিনেই ৭০টির বেশি দেশের ওপর নতুন শুল্ক হার নির্ধারণ করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে অংশীদার দেশগুলোকে বেঁধে দেয়া সময়সীমা শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই তা চূড়ান্ত করেন তিনি। দেশভেদে সর্বনিম্ন ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত সম্পূরক শুল্ক বসিয়েছে ওয়াশিংটন।
নতুন আরোপিত শুল্কের মধ্যে সিরিয়ার ওপর সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এরপরই আছে লাওস ও মিয়ানমার ৪০ শতাংশ। তবে ভালো বন্ধু হিসেবে পরিচিত ভারতের ওপর ধার্য করা হয় ২৫ শতাংশ শুল্ক, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ
ভারতীয় পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্কারোপের ঘোষণায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে ভারতের সাধারণ মানুষের মধ্যে। তাদের মতে, উচ্চ এই শুল্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে রপ্তানি বাণিজ্যকে। এছাড়া, দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে মূলত পোশাক, ওষুধ, গয়না ও পেট্রোকেমিক্যালের মতো পণ্য রপ্তানি করে ভারত। নতুন শুল্কের সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে ভারতের পোশাক খাত। এই খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রতিযোগী দেশগুলোর শুল্কহার তুলনামূলক কম হওয়া বাড়তি চাপ বাড়বে ভারতের ওপর। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২৫ শতাংশ শুল্ক অনুকূল বাণিজ্য চুক্তি নিশ্চিতে চাপে পড়বে নয়াদিল্লি।
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, ‘ভারতের উচিত প্রতিটি পদক্ষেপ খুব সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ্য রাখা অন্তত আগামী দুই-তিন মাস। এই মুহূর্তে ভারতের পাল্টা কোনো ব্যবস্থা নেয়া ঠিক হবে না। একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে সবকিছু ঠিক করতে হবে।’
ভারতের পোশাক রপ্তানি উন্নয়ন কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল মিথিলেশ্বর ঠাকুর বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা ছিল শুল্কহার ২০ শতাংশের কাছাকাছি হবে। এখন ভারতের প্রধান প্রতিযোগী বাংলাদেশ তুলনামূলক সুবিধা পাবে। ভিয়েতনামও ২০ শতাংশ শুল্কের একই সুবিধা পাবে।’
এদিকে, ভারতের গয়নার বাজারেও দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। জীবিকা হারানোর শঙ্কায় আছেন বহু কারিগর। বিশ্বের বৃহত্তম হীরা কাটার কেন্দ্র ভারতে। বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০টি হীরার মধ্যে নয়টি প্রক্রিয়াজাত হয় এখানে। প্রতি বছর ১০ বিলিয়ন ডলারের ভারতীয় গয়না রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এছাড়া, ২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণায় ধস নেমেছে ভারতের শেয়ার বাজারেও। ১৬টি প্রধান খাতের সবগুলোর সূচকই নিম্নমুখী।
এমন অবস্থায় ভারতের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী। সংসদে তিনি বলেন, দেশের কৃষক, শ্রমিক, উদ্যোক্তা, রপ্তানিকারক ও শিল্প রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে মোদী সরকার।
ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়াল বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির জন্য ভারত এরইমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক বাণিজ্য চুক্তি করেছে। অন্যান্য দেশের সঙ্গেও বাণিজ্য চুক্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বাড়াতে বদ্ধ পরিকর ভারত সরকার।’
এদিকে, ট্রাম্পের ১৯ শতাংশ শুল্কারোপকে স্বাগত জানিয়েছে পাকিস্তান। জ্বলানি তেলের মজুত উন্নয়নের চুক্তিকে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বৃহত্তর অর্থনৈতিক ও কৌশলগত চুক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছে ইসলামাবাদ।
পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব বলেন, ‘চুক্তিটি পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সত্যিকারের লাভজনক পরিস্থিতি তৈরি করবে। পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি খাতে বিনিয়োগ করবে যুক্তরাষ্ট্র। জ্বালানি খাত দিয়ে বিনিয়োগ শুরু হবে। ধীরে ধীরে খনিজ ও আইটি এবং ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন হবে। চুক্তির মূল লক্ষ্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগ একসঙ্গে চালানো।’
পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাণ প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। দেশটির বাণিজ্যে ১৯ শতাংশ শুল্ক হারকে গেম চেঞ্জার হিসেবে বর্ণনা করেছেন পাকিস্তানি ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।