ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়: জেলেনস্কি

ইউরোপ
বিদেশে এখন
0

ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বৃহস্পতিবার বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইমার্জেন্সি সামিটে অংশ নিয়ে তিনি আরও বলেন, শান্তি ফেরানোর নামে ইউক্রেনের জনগণের সাথে প্রতারণা করা যাবে না। এদিকে, বিবিসি'র তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা বন্ধ করলেও যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনে শান্তি ফেরাতে যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বে জোট গঠন করতে যাচ্ছে ইউরোপের অন্তত ২০ দেশ।

সামরিক সহায়তা স্থগিতের পর যুক্তরাষ্ট্র যখন ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে গোয়েন্দা তথ্য দেয়াও বন্ধ করে দিয়েছে তখন, দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পাশে দাঁড়িয়েছেন যুক্তরাজ্যের কিয়ার স্টারমার ও ফ্রান্সের ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলমান সংঘাতে কোণঠাসা ইউক্রেনের শেষ ভরসা এখন ইউরোপ।

ব্রিটিশ গণমাধ্যমের দাবি, ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের আলোচনায় এবার ইউরোপের নেতৃত্ব দেবে ব্রিটেন। পাশাপাশি গঠন করা হবে ইউক্রেন শান্তিরক্ষা জোট। বিবিসি'র তথ্য বলছে, এরইমধ্যে ব্রিটেন নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিতে সম্মত হয়েছে ইউরোপের ২০ দেশ। আর ইউক্রেনকে গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে ওয়াশিংটনের জায়গা নিতে চায় ফরাসি ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্ট।

এমন বাস্তবতায় বৃহস্পতিবার, বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইউরোপের নেতাদের সাথে জরুরি বৈঠক করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট। হোয়াইটে হাউজের ওভাল অফিসে চূড়ান্ত অপমানিত হওয়ার পর এই প্রথম ইউরোপের অন্তত ২৭ দেশের প্রতিনিধির সাথে এক টেবিলে বসলেন ভলোদিমির জেলেনস্কি।

ভেন্যুতে পৌঁছে, ইইউ জোটের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জেলেনস্কি বলছেন, রুশ আগ্রাসনের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত ইউরোপ প্রকৃত বন্ধুর পরিচয় দিয়েছে। এছাড়া, ইইউ জোটভুক্ত দেশের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে ৮৬০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, ইউরোপীয় কাউন্সিল ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আপনাদেরকে পাশে পেয়েছে। এই যুদ্ধে আমরা একা নই। এটা আমরা অনুভব করি, বিশ্বাস করি।’

ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরজুলা ফন ডার লাইয়েন বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ উপায়ে সামরিক সক্ষমতা বাড়তে হবে। এ কারণেই ইইউ নেতাদের সামনে 'রিআর্ম ইউরোপ প্ল্যান' উপস্থাপন করেছি। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনতে ৮০০ বিলিয়ন ইউরো খরচের পরিকল্পনা আছে।’

এদিন ইমার্জেন্সি সামিটের সাইডলাইনে ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট। এসময় বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ আর ইউরোপের নিরাপত্তা যেখানে জড়িত সেখানে কিয়েভ ও ইইউ জোটের উপস্থিতি ছাড়া কোনো আলোচনাই হতে পারে না।’

এছাড়া সম্মেলনে যোগ দিয়ে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন অক্ষুণ্ণ রাখার অঙ্গীকার করেছেন লিথুনিয়া ও লুক্সেমবার্গের রাষ্ট্রপ্রধান। পোলিশ প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন, ইউরোপ রাশিয়ার তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী, মস্কোকে হারিয়ে দেয়ার সক্ষমতা আছে তাদের।

যদিও, ইইউ জোটের ফরেন পলিসি বিভাগের প্রধান মনে করেন ইউক্রেনে চলমান সংঘাত থামাতে ইউরোপকে একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় আসতে হবে।

এদিকে, ইউরোপীয় নেতাদের এমন আচরণে রীতিমতো ক্ষুব্ধ মস্কো। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সহায়তার ওপর নির্ভর করে ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির আলোচনা থেকে সরে আসতে চায়।

ক্রেমলিন মনে করে, ফ্রাংকো-ব্রিটিশ জোট ইউক্রেনে ইউরোপীয় সেনা পাঠানোর উপযুক্ত সময় খুঁজছে। এছাড়া, রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলছে, ইউরোপের মধ্যস্থতাকারীরা ইউক্রেন যুদ্ধে ১ মাস অস্ত্র বিরতির যে প্রস্তাব করেছিলেন তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে মস্কো।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‘ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য ইউক্রেনের হয়ে এখন আলোচনার মঞ্চ সাজাচ্ছে। ২ মার্চ তারা সুনির্দিষ্ট একটি পরিকল্পনাও প্রকাশ করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তারা ইউক্রেনে ইউরোপের সেনা পাঠানোর মতলব করছে।’

এছাড়া, ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত ইস্যুতে ব্রাসেলসে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো প্রধান। বলেন, ন্যাটো আশা করে আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন একটি পাকাপোক্ত সমাধানে আসবে। তবে যে আলোচনার পরিস্থিতি যে কোনো সময় বিগ্রে যেতে পারে এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না মার্ক রুট।

এদিন, বৈঠকে অংশ না পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ইউক্রেনে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব তুলেছেন নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া, ইউক্রেনকে ৮টি ফাইটার জেট দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর নয়া সদস্য সুইডেন।

এএইচ