ট্রাম্পের হুমকির পরদিনই রাশিয়ার ভয়াবহ হামলা; যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ত্র চুক্তির পথে ইউক্রেন

রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনে ভবনধস
ইউরোপ
বিদেশে এখন
0

ট্রাম্পের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার হুমকির একদিন পরই ৩০০টিরও বেশি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনে ভয়াবহ আক্রমণ চালিয়েছে রুশ বাহিনী। এতে এক শিশুসহ কমপক্ষে ছয়জন নিহত ও ৪০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে কিয়েভের ২৭টি স্থানে। এ অবস্থায় শক্তি বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ত্র চুক্তির মূল নীতিগুলোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানালেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। অন্যদিকে মস্কো বলছে, কীভাবে নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করতে হয় তা খুব ভালো করে জানা আছে তাদের।

যুদ্ধ বন্ধে অগ্রগতির পথে না এগুলে ১০ দিনের মধ্যে শুল্কারোপ ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেয়ার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকিকে পাত্তাই দিচ্ছে না রাশিয়া। উল্টো ইউক্রেনে হামলার মাত্রা আরও বাড়িয়েছে মস্কো। বৃহস্পতিবার রাতে ৩০০ টিরও বেশি ড্রোন এবং আটটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে রাজধানী কিয়েভের ২৭টি স্থানে ভয়াবহ আক্রমণ চালিয়েছে রুশ বাহিনী।

ভয়াবহ রুশ হামলায় কিয়েভে বহু হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একটি হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড এবং স্কুল ও কিন্ডারগার্টেনেরও ক্ষতি হয়েছে। জীবন রক্ষায় ভূগর্ভে থাকা মেট্রো স্টেশনে আশ্রয় নিয়েছেন অনেক বাসিন্দা। হামলা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করেছেন তারা।

স্থানীয় সাধারণ জনগণের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমি ফোনটি হাতে নিতে নিতে দেখি, ৫টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভের দিকে আসছে। তখন আমি আমার স্ত্রীকে ঘুম থেকে উঠানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু ততক্ষণে আমাদের ভবনের খুব কাছাকাছি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়ে আমাদের মেয়ে এখন হাসপাতালে।’

আরও পড়ুন:

এরমধ্যেই মূল্যবান এফ-১৬ এবং মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমানের অবস্থান ফাঁস করে রাশিয়ার হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করার অভিযোগে একজন বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাকে আটক করেছে ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা। এছাড়া শক্তি বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ত্র চুক্তির মূল নীতিগুলোর অনুমোদন দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এমনকি শান্তির স্বার্থে রাশিয়ার উপর সব দিক দিয়ে চাপ সৃষ্টির জন্য মার্কিন সরকারের নেয়া পদক্ষেপের প্রশংসাও করেছেন তিনি।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘শান্তির জন্য রাশিয়ার উপর চাপ দেয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত পদক্ষেপকে আমরা অত্যন্ত মূল্যবান বলে মনে করছি। শান্তির জন্য এখনই রাশিয়াকে বাধ্য করার পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। কারণ মস্কো যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চাইছে। আমরা বিভিন্ন স্তরে অংশীদারদের সঙ্গে নতুন করে বৈঠকের প্রস্তুতিও নিচ্ছি। ইউক্রেন এবং যারা শান্তি চান তাদের সকলের অবস্থান শক্তিশালী করাই লক্ষ্য।’

এদিকে রাশিয়া বলছে, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ও হুমকি কীভাবে মোকাবিলা করতে হয় তা খুব ভালো করে জানা আছে মস্কোর। বরং পশ্চিমারা নিষেধাজ্ঞা চক্রে আটকে থেকে, সামগ্রিকভাবেই বিশ্ব অর্থনীতির বড় ক্ষতি করছে বলেও মন্তব্য করেছেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা।

তিনি বলেন, ‘পশ্চিমারা নিষেধাজ্ঞা পদক্ষেপে আটকে আছে। এতে বোঝা যাচ্ছে স্পষ্টতই তাদের অন্যান্য বিকল্প ফুরিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে আমরা এই সব কিছুর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছি এবং ব্যবস্থাও নিচ্ছি। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে আমরা নিষেধাজ্ঞাকে সুবিধা হিসেবে ব্যবহার করছি। তবে নিঃসন্দেহে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তারা বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি করছে।’

এদিকে রাশিয়ার জ্বালানি ও সামরিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনও। ২০২২ সালে রুশ অভিযান শুরুর পর উভয়পক্ষই বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা-পাল্টা হামলার কথা অস্বীকার করে আসছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য বলছে, যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের জনবহুল এলাকার বেসামরিক অবকাঠামোতে চালানো রুশ বাহিনীর হামলায় শুধু শিশুই নিহত হয়েছে দুই হাজার ৮০০ এর বেশি।

এসএস