একদিকে হামাস নির্মূলের নামে গাজায় সেনা অভিযানের মাধ্যমে গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরাইল। অন্যদিকে হুথি যোদ্ধাদের শেষ করার নামে ইয়েমেনে বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। দক্ষিণ লেবাননে নিরাপত্তার নামে ইসরাইলি সেনারা অবস্থান করছেন। সিরিয়ার মধ্যেও সেনাঘাঁটি স্থাপন করেছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। ইরানের সঙ্গে অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি নিয়ে চলছে টানাপড়েন। ইহুদি এই এক ভূখণ্ড অস্থির করে রেখেছে গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে। সহযোগিতা করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
বৃহস্পতিবারের পর রোববারও ইয়েমেনের রাজধানী সানায় ভয়াবহ মার্কিন বিমান হামলায় প্রাণ গেছে বেশকয়েকজনের। এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দোকানপাট, ঘরবাড়ি আর যানবাহন। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইয়েমেনে হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও হুতিদের দাবি, লোহিত সাগরে মার্কিন রণতরীতে হামলা করেছে তারা।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, 'সব কাজ শেষ, ঘুমাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো সবাই। এমন সময় বিমানের আওয়াজ পেলাম। মিসাইল পড়তে থাকলো। শকওয়েভে চলে গেলাম সবাই। অনেকেই মারা গেলো, আহতও হলো। এটা তো গুরুতর অপরাধ। যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছা করে সাধারণ মানুষকে টার্গেট করছে।'
এদিকে গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি আগ্রাসনে নতুন করে প্রাণ গেছে আরও বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনির। অবরুদ্ধ পশ্চিমতীরের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে ভয়াবহ আগ্রাসন চালাচ্ছে আইডিএফ। উত্তর গাজায় জোরালো হয়েছে হামাসবিরোধী অভিযান। খান ইউনিসে ভয়াবহ অভিযানে তাবুর মতো শেষ আশ্রয়টুকু হারাতে হচ্ছে গৃহহীন বাসিন্দাদের।
তাদের মধ্যে একজন বলেন, 'আমরা ঘরেই ছিলাম। ইহুদি একজন এসে এলাকা খালি করতে বললো। জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে, বললো এখানে আবারও হামলা হবে। ঘরের বাইরেই ছিলাম যখন হামলা হলো।'
অন্য একজন বলেন, 'মধ্যরাতে এফ সিক্সটিন বিমান এসে পড়লো বাড়ির ওপর। বাচ্চারা মারা গেলো। দখলদাররা জানতো এখানে সাধারণ মানুষ। এরপরও হামলা করলো। আসলে কোন স্থান নিরাপদ না আমাদের জন্য।'
মার্চ থেকে গাজায় সব ধরনের ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে রেখেছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। দক্ষিণ গাজায় জরুরি সেবা দেয়া স্বেচ্ছাসেবীদের গেলো মাসে হত্যার ঘটনাকে পেশাদারদের ব্যর্থতা বলেও চালিয়ে দিচ্ছে তেল আবিব। জাতিসংঘ বলছে, নতুন করে ইসরাইলি বর্বরতায় উপত্যকায় প্রাণ গেছে অন্তত ৬০০ শিশুর।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, 'বাচ্চারা মারা যাচ্ছে। বাচ্চাদের মানসিক অবস্থা বিধ্বস্ত। আমি ওকে বুকের দুধও খাওয়াতে পারিনি, দুধ কিনেও খাওয়াতে পারিনি।'
এমন অবস্থায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য কায়রোতে আছেন ইসরাইলের প্রতিনিধিদল। আলোচনা হবে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি নিয়ে। এর আগে গেলো সপ্তাহে হামাস ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দেয়। আপাতত কাতার আর মিশর একটি খসড়া প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে ৫ থেকে ৭ বছরের জন্য যুদ্ধবিরতির কথা রয়েছে। রয়েছে গাজা থেকে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহার, ইসরাইলি বন্দিদের মুক্তি আর ফিলিস্তিনি কারাবন্দিদের মুক্তির বিষয়টি।
এদিকে গাজায় গণহত্যা চালিয়ে নিজের দেশেও তোপের মুখে পড়ছেন নেতানিয়াহু। ইসরাইলি মন্ত্রিসভায় অস্থিরতা আর বিভক্তি পৌঁছেছে চরমে। নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেতের প্রধান এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন। অভিযোগ করেছেন, নেতানিয়াহু সবসময় চাইতেন, এমন সাংবিধানিক সংকটের মধ্যেও যেন শুধু তার প্রতি অনুগত থাকা হয়। দাবি করেন, সরকারবিরোধী বিক্ষোভের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বলেছিলেন নেতানিয়াহু, ৭ অক্টোবরের হামলার বিষয়ে শিন বেত আগে থেকে সতর্ক করেনি সরকারকে, এমন অভিযোগও অস্বীকার করেছেন সংস্থার প্রধান রনেন বার।
এই ঘটনার পর ইসরাইলের প্রধান বিরোধী দলের নেতা ইয়ার লাপিদ নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে অনৈতিক দাবি আর সরকারবিরোধী বিক্ষোভ গোয়েন্দাদের দিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টার অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন।
এতো চেষ্টা করেও কোনোভাবেই সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমাতে পারছে না নেতানিয়াহু প্রশাসন। এতোদিন শুধু শনিবার সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হলেও এখন প্রায় প্রতিদিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন ইসরাইলের সাধারণ মানুষ। সোমবারের বিক্ষোভের সময় বিক্ষোভকারীদের জোর করে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। বন্দিদের মুক্ত করতে যদি গাজা থেকে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহার করে নিতে হয়, তাতেও সরকারকে সম্মতি জানানোর দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা।