ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু চুক্তি নিয়ে জলঘোলা হয়েছে অনেক। দফায় দফায় আলোচনার পরও এখন পর্যন্ত ফলাফল শূন্য। ডোনাল্ড ট্রাম্প আশাবাদী হয়েও বারবার দিচ্ছেন উসকানির বক্তব্য। অন্যদিকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিলেও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখার হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছে তেহরান। এমন অবস্থায় মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন দিচ্ছে ভয়ঙ্কর তথ্য। নতুন গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, ওয়াশিংটন-তেহরান আলোচনার মধ্যেই ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে হামলার পরিকল্পনা করছে ইসরাইল।
আর এতে ব্যর্থ হতে পারে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক তৎপরতা। মধ্যপ্রাচ্যে বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়তে পারে সংঘাত। যে সংঘাত যুক্তরাষ্ট্র এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে আসছে গাজায় ইসরাইলি অভিযান শুরুর পর থেকেই। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরাইল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে চলছে টানাপড়েন। পরমাণু আলোচনার উপরই নির্ভর করবে ইসরাইল কোথায় কীভাবে হামলা করবে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদন আরো বলছে, গেলো কয়েক মাস ধরেই ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে ইসরাইলের হামলার বিষয়টি জোরালো হচ্ছে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর তৎপরতা আর যোগাযোগ ব্যবস্থায় আড়ি পেতে অনেক তথ্য হাতে এসেছে মার্কিন গোয়েন্দাদের। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রস্তুতির মধ্যে দেখা গেছে, বিমান হামলার মহড়ার প্রস্তুতি। এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও ইরানকে হুমকি দিয়েছেন, কোনোভাবে পরমাণু চুক্তিতে না আসলে কিংবা পরমাণু প্রকল্পের কাজ বন্ধ না করলে সামরিক হস্তক্ষেপে বাধ্য হবে ওয়াশিংটন।
সংবাদমাধ্যম সিএনএন’এর বিশ্লেষণ বলছে, ইরানের সামরিক বাহিনী এখন দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা ছাড়া ইরানের পরমাণু কেন্দ্রের কোনো ক্ষতি ইসরাইলের একার পক্ষে করা সম্ভব না। যদিও, ইসরাইলি সূত্র বলছে, পরমাণু আলোচনা ফলপ্রসূ না হলেও যুক্তরাষ্ট্র যদি সহযোগিতা না করে, সেক্ষেত্রে ইরানে হামলা চালাবে ইসরাইল। মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, ইসরাইলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এই পদক্ষেপ নেবেন প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বিষয়ে কথা না বললেও এমন অবস্থায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে আসা এতো সহজ হবে না।
মার্কো রুবিও বলেন, ‘আমরা উৎসাহ দিচ্ছি। সমৃদ্ধি আর শান্তির পথে আসতে বলছি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথ দেখাচ্ছি। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ছাড়া তারা যদি সাধারণ মানুষের স্বার্থে অন্যান্য দেশের মতো পরমাণু প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যায়, আমাদের সমস্যা নেই। কিন্তু প্রেসিডেন্টের কথা পরিষ্কার। ইরানের পরমাণু অস্ত্র থাকবে না। তাদেরকে চুক্তিতে আসতে হবে। তারা ২০ বছর ধরে শান্তি আর সমৃদ্ধির পথে হাঁটতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। যে কারণে পরমাণু চুক্তির পথ অনেক কঠিন।’
এদিকে গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ব্যারেল প্রতি এক ডলার। ব্যারেল প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬৬ ডলার দরে। ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে ইসরাইল হামলা চালালে মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি উত্তোলক দেশগুলো অস্থিতিশীল হবে। বিশ্ববাজারে ব্যাহত হবে জ্বালানি সরবরাহ। এতে করে আরো বাড়তে পারে জ্বালানির দর।