যুক্তরাষ্ট্রের বহুল আলোচিত স্টেলথ বোমারু বিমান ‘বি টু বোম্বার্স’ আর বিস্ফোরক বাঙ্কার ‘বাস্টিং বোমা 'জিবিউ ফাইভ সেভেন’। এই যুদ্ধাস্ত্রের নামেই সরব আন্তর্জাতিক সব গণমাধ্যম। ভারত মহাসাগরের ডিয়েগো গার্সিয়ার মার্কিন - ব্রিটিশ সামরিক ঘাঁটিতে মার্চেই মোতায়েন করা হয়েছে ছয়টি বোমাবাহী যুদ্ধবিমান ‘বি টু বোম্বার্স’। সেসময় ইয়েমেনে অভিযান চালিয়েছিলো ওয়াশিংটন। মার্কিন বিমানবাহিনীতে এই মারণাস্ত্রের সংখ্যা মাত্র ২০টি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গোপন আর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বোমা বহনে সক্ষম এই বিমানগুলো ব্যবহারের অন্যতম স্থান মধ্যপ্রাচ্য।
বি টু বোমারু বিমানের সক্ষমতা আছে ৩০ হাজার পাউন্ডের ‘বাঙ্কার বাস্টার জিবিইউ ফাইভ সেভেন’ বোমা বহনের। এই বোমা ডিজাইনই করা হয়েছে মাটির অনেক গভীরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার সক্ষমতা সংযোজন করে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই বোমাই আঘাত হানতে পারবে পর্বতে ঘেরা মাটির গভীরে থাকা ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের মিসাইলের মজুত ধ্বংস, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের হত্যার মতো ভয়াবহ অপরাধ ইসরাইল করছে ঠিকই। কিন্তু ইরানের পরমাণু প্রকল্পের কোন ক্ষতি যুক্তরাষ্ট্রের বোমারু বিমান কিংবা বাঙ্কার বাস্টার বোমা ছাড়া করা সম্ভব না।
এই বোমারু বিমানগুলো তৈরিতে খরচ পড়ে ২১০ কোটি ডলার। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল সামরিক বিমান এটি। এখন পর্যন্ত নর্থরোপ গ্রুম্যান এই মডেলের ২১টি বিমান তৈরি করেছে। এই বোমারু বিমানের গতিসীমা ছয় হাজার নটিক্যাল মাইলের ওপরে। যা দিয়ে খুব সহজেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে মধ্যপ্রাচ্যে হামলা করা সম্ভব। এই বোমারু বিমান দিয়ে একসঙ্গে ১৬টি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় পরমাণু বোমা ‘বি এইট থ্রি’ ছোড়া সম্ভব। এই বোমারু বিমান দিয়েই ছোড়া হয় ‘বাঙ্কার বাস্টার জিবিউ ফাইভ সেভেন’।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ বলছে, এখন পর্যন্ত ফোর্দোই ইরানের সবচেয়ে গভীরে থাকা পরমাণু কেন্দ্র। দুর্গম পর্বতের মাঝে মাটির গভীরে এই স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এই পরমাণু কেন্দ্রের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জন্য ব্যবহৃত অন্তত দুই হাজার সেন্ট্রিফিউজ এই কেন্দ্রে সচল রয়েছে। এখানেই ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ফোর্দোতে ১৬৬ কেজি ইউরেনিয়াম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ হয়েছে। ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ হলেই ইরানের পক্ষে সম্ভব পরমাণু বোমা বানানো। যে কারণে এই পরমাণু কেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্র বোমারু বিমান আর বাঙ্কার বাস্টার বোমা দিয়ে হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইরান-ইসরাইল চলমান উত্তেজনার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়েছে আরেকটি বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস জেরার্ল্ড আর ফোর্ড। এক হাজার ১০০ ফুটের পরমাণু সমরাস্ত্র বহনে সক্ষম এই ক্যারিয়ার খুব দ্রুতই পাঠানো হচ্ছে ভূমধ্যসাগরে। এক হাজার ৩০০ কোটি ডলারের এই ক্যারিয়ার খুব দ্রুতই যুক্ত হবে পারস্য উপসাগরে অবস্থিত ইউএসএস কার্ল ভিনসন আর ইউএসএস নিমিৎজের সঙ্গে। মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়াবে কিনা, সেই আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।