শত শত যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে আক্রমণের পর ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধরাশায়ী হতে হয় ইসরাইলকে। যার জেরে ১২দিনের মাথায় ঘটে যুদ্ধের ইতি। সাম্প্রতিক সংঘাতে ইসরাইলকে সবচেয়ে বেশি সাফল্য এনে দিয়েছে অভিনব একটি কৌশল। আর তা হলো, গোপনে ইরানের ভেতরে ঢুকে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করা। এর পেছনে রয়েছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। বিভিন্ন ভিডিও পর্যালোচনা করে এমন খবর প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা।
একটি ঝাপসা ভিডিওতে দেখা যায়, ছদ্মবেশী পোশাক, নাইট-ভিশন চশমাসহ সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন সরঞ্জাম সজ্জিত মোসাদ সদস্যরা মরুভূমির মতো জায়গায় বসে অস্ত্র স্থাপন করছেন। ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের জন্য এসব অস্ত্র বসানো হয়, যাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে হামলা চালাতে পারে ইসরাইলি যুদ্ধবিমান দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম একটি খোলা জায়গা থেকে পাওয়া স্পাইক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপকের ধ্বংসাবশেষের ছবি প্রকাশ করেছে।
এই ধরনের অভিযান ইসরাইলের পুরনো কৌশলের অংশ। ২০২০ সালের নভেম্বরেও ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদেহকে হত্যার সময়ও এমনটা দেখা গিয়েছিল। সেই ঘটনায়ও মোসাদ দূর নিয়ন্ত্রিত ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত অস্ত্র ব্যবহার করে তেহরানের কাছাকাছি একটি শহরে ফখরিজাদেহকে হত্যা করে।
যুদ্ধে ইসরাইল প্রচুর সংখ্যক ছোট বিস্ফোরক-ভর্তি ড্রোন ও কোয়াডকপ্টার ব্যবহার করে ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করে। ইরানজুড়ে পাওয়া যায় পিকআপ ট্রাকের সন্ধান। যেগুলোর পেছনে ছিল ড্রোন উৎক্ষেপণে বিশেষভাবে তৈরি লঞ্চ প্যাড। এগুলো নির্ধারিত লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছে ড্রোন উৎক্ষেপণ করত। ইসরাইলের এ একই কৌশলে গত জুনের শুরুতে রাশিয়ার চারটি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে এক-তৃতীয়াংশ কৌশলগত বোমারু বিমান ধ্বংস করেছিল ইউক্রেন।
পরে জানা যায়, ইসরাইলি বাহিনী ইরানের অভ্যন্তরে ছোট ড্রোন তৈরির জন্য ছোট ছোট উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করেছিল। এমনই এক কেন্দ্র পাওয়া যায় তেহরানের দক্ষিণে শহরে রে-তে। যেখানে একটি তিনতলা ভবনে ছিল ড্রোন, হোমমেড বোমা ও বিস্ফোরক। ঘটনাটির পর ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভিতে আরেকটি অভিযানের ভিডিও দেখানো হয়। যেখানে ছয়জন ইরানি মোসাদ এজেন্ট- কোয়াডকপ্টার, টাইম বোমা, গ্রেনেড ও অন্যান্য অস্ত্র তৈরি করছিলেন। আটককৃতদের চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় টেলিভিশনে স্বীকারোক্তি দেখানো হয়।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ এয়াল জামিরও এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, তাদের কমান্ডো বাহিনী ইরানে গোপন অভিযান চালিয়েছে। তবে তিনি স্পষ্ট করেননি। এদিকে ইরানি কর্তৃপক্ষ ইসরাইলি কমান্ডো অভিযানের বিষয়ে সরাসরি কিছু বলেনি, তবে গোটা দেশে মার্কিন ও ইসরাইলের সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগে অনেক বিশ্বাসঘাতককে গ্রেপ্তার করার খবর পাওয়া গেছে।