‘স্কুইড গেম’ এর রেড লাইট-গ্রিন লাইট খেলার কথা মনে আছে নিশ্চয়ই? লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে এগিয়ে যেতে হবে খেলোয়াড়কে। তবে তাকানোর সময় থাকতে হবে ধীর-স্থির। নড়াচড়া করলেই মৃত্যু নিশ্চিত।
বাস্তব জীবনে স্কুইড গেমের রেড লাইট-গ্রিন লাইট খেলাটি প্রতিদিনই মঞ্চস্থ হচ্ছে গাজায়। যার কারিগর গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন, সংক্ষেপে জিএইচএফ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল সমর্থিত সংস্থাটি উপত্যকায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৪৫ দিন ধরে। আর এসময় ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন সাত শতাধিক ফিলিস্তিনি।
ত্রাণ নিতে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বলেন, ‘ত্রাণ সংগ্রহের সময় ব্যান্ডেজ নিয়ে আসি। কারণ কখন আমাকে বা আমার পাশের মানুষকে গুলি করা হয়, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। দেখুন ব্যান্ডেজে আহতদের রক্ত লেগে আছে।’
মিশর ভিত্তিক স্বাধীন সংবাদপত্র মাদা মাসরের প্রতিবেদন বলছে, মধ্য ও দক্ষিণ গাজায় চারটি বিতরণ কেন্দ্র পরিচালনা করছে জিএইচএফ। প্রতিদিন গড়ে দুই ঘণ্টা হেঁটে ত্রাণ নিতে যান ফিলিস্তিনিরা। আইডিএফ ঘোষিত কমব্যাট জোনে কেন্দ্রগুলো অবস্থিত হওয়ায় কেন্দ্র খোলার আগে কিংবা পরে পৌঁছানোর অর্থ মৃত্যু। যদিও দৈনিক মাত্র নয় থেকে ১৩ মিনিট খোলা থাকে জিএইচএফ। কখনও অনলাইনে পোস্ট দিয়ে কেন্দ্র খোলার কথা ঘোষণা করা হয়, কখনও ঘোষণা ছাড়াই চলে সহায়তা কার্যক্রম। তাই প্রতিনিয়তই শোনা যাচ্ছে খাদ্য সংগ্রহের সময় গাজাবাসীর মৃত্যুর খবর।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, স্নাইপারের মাধ্যমে ত্রাণ প্রত্যাশীদের টার্গেট করেন ওয়াচ টাওয়ারে থাকা ইসরাইলি সেনারা। বিষয়টি স্বীকার করে আইডিএফের এক সেনা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন হারেৎজ পত্রিকায়। যেখানে তিনি দাবি করেন, ত্রাণকেন্দ্রের কর্মরত সেনাদের অভিযানের নাম ‘অপারেশন সল্টেড ফিশ’। যা স্কুইড গেইমের রেড লাইট-গ্রিন লাইট খেলার ইসরাইলি শিশুদের সংস্করণ।
যদিও সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছে জিএইচএফ। সংস্থাটির দাবি, কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা ও সুরক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। যা বিঘ্নিত হলেই নেয়া হয় পদক্ষেপ। অপতথ্যের কারণে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে সংস্থাটি।
উপত্যকায় জিএইচএফের কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করতে এরইমধ্যে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে বিশ্বের ১৭০টিরও বেশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগে সংস্থাটির সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গাজায় ত্রাণ সরবরাহের কার্যক্রম শুধুমাত্র জাতিসংঘ ও রেড ক্রিসেন্ট পরিচালনা করবে, যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে এমন দাবি অন্তর্ভুক্ত করেছে হামাস। এমন পরিস্থিতিতে হত্যাযজ্ঞ বন্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকরের অপেক্ষায় বিশ্ববাসী।