জলপাইগাছকে ফিলিস্তিনের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফিলিস্তিনে প্রাকৃতিক দৃশ্য, শান্তি, আশা ও ভরণপোষণের প্রতীক হিসেবে বটবৃক্ষের মতো দাঁড়িয়ে আছে এ গাছ। এ অঞ্চলের কৃষকদের জীবিকার প্রধান উৎস জলপাই চাষ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এর সঙ্গে যুক্ত আছেন বাসিন্দারা। একটি জলপাই গাছের গড় আয়ু প্রায় ৫০০ বছর।
গেল কয়েক দশক ধরেই দখলকৃত পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে জলপাই গাছ উপড়ে ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে ইসরাইলি সেনারা। ফিলিস্তিনি জমি দখল ও বাসিন্দাদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করার লক্ষ্যেই তারা এ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরের আল-মুগাইর গ্রামে কৃষির ইতিহাস অনেক পুরোনো। এখানকার মানুষ মূলত কৃষি ও পশুপালনের ওপর নির্ভরশীল।
সম্প্রতি সামরিক অভিযানে ইসরাইলিরা মাইলের পর মাইল জমির জলপাই উপড়ে সাবার করে ফেলেছে।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘তাদের লক্ষ্য আমাদের জমি দখল করা। এখান থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করা। তবে ফিলিস্তিনিদের শিকড় জলপাই গাছের চেয়েও গভীর।’
রামাল্লাহ অঞ্চলের সবচেয়ে উর্বর জমিগুলো থেকে কেটে ফেলা হয়েছে হাজার হাজার জলপাই গাছ। দখল করা হয়েছে ফিলিস্তিনিদের খামার ও পানির উৎস। এতে বিপাকে পড়েছেন বাসিন্দারা।
স্থানীয় একজন বলেন, ‘১০০ বছরেরও বেশি বয়সী শত শত জলপাই গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে সবকিছু। এটি স্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়।’
আরও পড়ুন:
ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলছে, আল-মুগাইয়ের গ্রামে এক ইসরাইলিকে গুলি করে হত্যার জেরে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে তারা। এছাড়া প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করতে এসব গাছ কাটা হচ্ছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ডের প্রধান আভি ব্লুথ বলেন, ‘এ অঞ্চলের প্রতিটি গ্রাম এবং প্রত্যেকটি শত্রুর জানা উচিত যে, যদি তারা ইসরাইলিদের ওপর আক্রমণ চালায়, তাহলে তাদের চরম মূল্য দিতে হবে। আল-মুগাইর গ্রাম লক্ষ্য করে অভিযান চালিয়ে যাবে ইসরাইল। এ অঞ্চল থেকে হামলাকারীদের বিতাড়িত করা হবে।’
এদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরের আতারা গ্রামে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলিরা। রামাল্লাহর উত্তরে অবস্থিত গ্রামটিতে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা বাড়িতে ঢুকে আক্রমণ চালিয়ে পুড়িয়ে দেয় বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি, গাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা।
গাজার পশ্চিম তীরের একজন বলেন, ‘হুট করে বিশাল এক শব্দ শুনতে পেলাম। দৌড়ে নিচে এসে দেখি গাড়িগুলো জ্বলছে। বাড়িতেও আগুন দিয়েছে তারা।’
পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় ২৭ লাখ ফিলিস্তিনিদের বসবাস। এদের মধ্যে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীর সংখ্যা ৭ লাখের মতো। এসব অঞ্চল থেকে এখন ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার মিশনে নেমেছে ইসরাইল।