নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাছির আহমেদ মামলার সত্যতা স্বীকার করে জানান, মামলায় বেশিরভাগই যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মী। এজাহারনামীয় তিনজন আসামিকে মামলার রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানায় এই কর্মকর্তা।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো মো. হানিফ (৫০), তার ছেলে জান্নাতুল ফেরদৌস জিসান (২১) ও চাচাতো ভাই শওকত মিথুন (৩৬)। তারা নগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের শহীদনগরের বাসিন্দা।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তার সমর্থকরা বাধা প্রদান করে এবং সড়কে ট্রাক দিয়ে বালি ফেলে ও বাঁশ দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজন জড়ো করে রাতভর পুলিশকেও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। সকালে তাকে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের দিকে নেবার পথে বঙ্গবন্ধু সড়কের কালিরবাজার মোড়ে আইভীর সমর্থক, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বাধা সৃষ্টি করে। পরে তারা আইভীকে বহনকারী পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে। এতে পুলিশের তিনজন সদস্য আহত হন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে মামলায়।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জান্নাতুল ফেরদৌস জিসান (২১) ‘প্রেস নারায়ণগঞ্জ’ নামে একটি স্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টালের সংবাদদাতা হিসেবে কর্মরত। এছাড়াও সে প্রথম আলো পত্রিকার পাঠক সংগঠন ‘বন্ধুসভা’র নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক।
জিসানের চাচা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘রাত পৌনে ১টার দিকে বাসায় আসে সদর মডেল থানা পুলিশ। কোনো সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়াই তারা বাসায় ঢুকে তল্লাশি করতে শুরু করে। পরে জিসান ও তার বাবার নামে মামলা আছে বলে থানায় নিয়ে চলে যায়। কিন্তু কী মামলা সেইটা আমাদের বলে নাই। সকালে আমরা জানতে পারি আইভীকে গ্রেপ্তারে বাধার ঘটনায় মামলা।’
কিন্তু অভিযানের রাতে জিসান বা তার বাবা ওই এলাকাতে (দেওভোগ) যায়নি বলে দাবি করেন জিসানের চাচা হাবিবুর।
এছাড়া পুলিশের দায়ের করা ওই মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীর পদবি উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) তাসমিন আক্তার বলেন, ‘সাবেক মেয়রকে গ্রেপ্তারে গেলে পুলিশ বাধার সম্মুখীন হন। কিন্তু রাতভর পুলিশ খুবই ধৈর্যের সাথে সেখানে অবস্থান করে এবং সকালে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। তাকে গ্রেপ্তারের অভিযানে বাধা দেয়ার ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ৮ মে রাতে আইভীকে গ্রেপ্তার করতে নগরীর দেওভোগে তার পৈতৃক বাড়ি ‘চুনকা কুটিরে’ গেলে তার সমর্থক ও স্থানীয় এলাকাবাসী বাধা দেন। আইভীও ‘রাতের আঁধারে’ কোথাও যাবেন না বলে জানান।
পরে সকালে স্বেচ্ছায় গাড়িতে ওঠেন তিনি। তাকে নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় কালিরবাজার মোড়ে পুলিশের গাড়িবহরে হামলা করা হয়। এতে পুলিশসহ আইভীর বেশ কয়েকজন সমর্থক আহত হন।