কান্নাজড়িত কণ্ঠে আকাশসমান কষ্টের কথা এখন টিভিকে জানান পাঁচ বছর আগে পুলিশ ফাঁড়িতে মারা যাওয়া রায়হানের মা।
তিনি বলেন, ‘চারজন মানুষ মিলে চাক্ষুষ প্রমাণ মেরে ফেলছে। ৬৩টি সাক্ষীতেও আসছে যে, আমার ছেলেকে মেরে ফেলছে। এমনকি সিসি ক্যামেরা ফুটেজেও আসছে। আমার ছেলেকে সুস্থ অবস্থায় নিয়ে মেরেছে।’
রায়হান হত্যার প্রধান আসামি রায় ঘোষণার আগে জামিন পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেন স্বজনরাও।
রায়হানের আত্মীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘সাজার জায়গায় আমরা ফাঁসির দাবি জানিয়েছি, সেখানে জামিন হয়ে যায় কীভাবে? এটা তো আমরা মেনে নিতে পারবো না।’
আত্মীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘যেসময় ন্যায়বিচার পাওয়ার কথা ছিল সেসময় প্রধান আসামিকে জামিন দেয়া হলো। এতে আমরা খুবই মর্মাহত।’
পাঁচ বছর আগে সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে নির্মমভাবে নির্যাতনের শিকার হন ৩৪ বছর বয়সী রায়হান আহমদ। পরিবারের অভিযোগ—পুলিশি নির্যাতনের ফলেই তার মৃত্যু হয়, যা ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে সারা দেশে তীব্র আলোড়ন তোলে। মানববন্ধন বিক্ষোভ মিছিল থানা ঘেরাও সহ নানা কর্মসূচিতে তখন উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা সিলেট।
পরবর্তীতে রায়হানের স্ত্রীর মামলাতে প্রধান আসামি এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে ১ মাস পর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২১ সালের ৫ মে পিবিআই আলোচিত এ মামলার অভিযোগ পত্রে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে প্রধান হিসেবে অভিযুক্ত করার পর থেকেই কারাগারে ছিলেন তিনি।
উচ্চ আদালত থেকে এসআই আকবর হোসেনের জামিন মঞ্জুরের পর নিম্ন আদালত থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। পরে এ–সংক্রান্ত তথ্যের নথি কারাগারে পাঠানো হলে রোববার তাকে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয় বলে নিশ্চিত করেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২–এর জ্যেষ্ঠ জেল সুপার।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জ্যেষ্ঠ জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, ‘আদালত জামিন করলে সেটা নিম্ন আদালত থেকে কনফার্ম করে। তারপর আমাদের কাছে পাঠায়। পরে আমরা যাচাই বাছাই করে মুক্তি দিয়ে দেই। জামিননামা আগেই পেয়েছি সেজন্য তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।’
মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ, রায় ঘোষণা বাকি কিন্তু রায়ের আগে জামিনে মুক্তি পাওয়ায় আসামির পলাতক হয়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন আইনজীবীরা।
বাদী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবুল ফজল চৌধুরী বলেন, ‘তদন্তকালীন সময়ে কানাইঘাটে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছে থেকে বিভিন্ন আলামতও পাওয়া গিয়েছে। যেহেতু তার আগের পালানোর ইতিহাস আছে, সেখানে এখন দীর্ঘদিন পর জামিন পেয়েছে। এখনও সে পালিয়ে যেতে পারে আমরা শঙ্কা করছি।’
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে রায়হান আহমেদকে নির্যাতন করা হয়। পরদিন ১১ অক্টোবর ভোরে গুরুতর অবস্থায় তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই মৃত্যু হয় রায়হানের।