সাবেক সচিব আবু আলম শহীদকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত

কারাগারে নেয়া হচ্ছে আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খানকে
আইন ও আদালত
0

ঢাকার শাহবাগ থানার সন্ত্রাসবিরোধ আইনের মামলায় আওয়ামী লীগ আমলে স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আবু আলম শহীদ খানকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ (সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই তৌফিক হাসান কারাগারে পাঠানোর আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। ঢাকার মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামানের আদালতে এ বিষয়ে শুনানি হয়।

এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রসিকিউশনে এসআই জিন্নাত আলী।

এর আগে, আবু আলম শহীদ খানকে দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় এনে রাখা হয়। শুনানিকালে তাকে আদালতে তোলা হয়।

গতকাল (রোববার, ৭ সেপ্টেম্বর) রাতে শহীদ খানকে তার বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগ থেকে পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়।

গত ২৮ অগাস্ট ডিআরইউতে মঞ্চ-৭১ এর অনুষ্ঠানে হামলার পর সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীসহ ১৬ জনকে যে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের উপ-কমিশনার তালেবুর রহমান জানিয়েছেন।

অন্য আসামিরা হলেন-লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন), মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন, মঞ্জুরুল আলম, কাজী এটিএম আনিসুর রহমান বুলবুল, গোলাম মোস্তফা, মো. মহিউল ইসলাম ওরফে বাবু, মো. জাকির হোসেন, মো. তৌছিফুল বারী খাঁন, মো. আমির হোসেন সুমন, মো. আল আমিন, মো. নাজমুল আহসান, সৈয়দ শাহেদ হাসান, মো. শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, দেওয়ান মোহম্মদ আলী ও মো. আব্দুল্লাহীল কাইয়ুম।

মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি বন্ধের লক্ষ্যে গত ৫ অগাস্ট ‘মঞ্চ ৭১’ নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এ সংগঠনের উদ্দেশ্য জাতির অর্জনকে মুছে ফেলার সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে বাংলাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আত্মত্যাগের প্রস্তুতি নেওয়া। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গত ২৮ অগাস্ট সকাল ১০টায় একটি গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

আরও পড়ুন:

সেগুনবাগিচায় বেলা ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর মধ্যেই এক দল ব্যক্তি হট্টগোল করে স্লোগান দিয়ে সভাস্থলে ঢুকে পড়েন। একপর্যায়ে তারা অনুষ্ঠানস্থলের দরজা বন্ধ করে দেন। অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া কয়েকজনকে লাঞ্ছিত করেন। হট্টগোলকারীরা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন এবং আলোচনায় অংশ নেয়াদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। একপর্যায়ে অতিথিদের অনেককেই বের করে দেয়া হলেও আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এবং অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। পরে পুলিশ এসে ১৬ জনকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন এসআই আমিরুল ইসলাম। পরবর্তীতে এ মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

১৯৯৬ সালে সচিবালয়ে তৎকালীন বিএনপি সরকারবিরোধী ‘জনতার মঞ্চের’ অন্যতম সংগঠক ছিলেন আবু আলম শহীদ খান। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি শেখ হাসিনা উপ-প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পরে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় ফিরলে শহীদ খানকে ওএসডি হয়ে থাকতে হয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে তিন মাসের মধ্যে পরপর চারটি পদোন্নতি দিয়ে তাকে জ্যেষ্ঠ সচিব করা হয়। সে সময় তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী সচিব হিসেবে পরিচিত ছিলেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে তিনি ২০১৫ সালে অবসরে যান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক ছাত্র আবু আলম শহীদ খান সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর কিছুদিন একটি বেসরকারি টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবেও কাজ করেছেন।

২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটে নির্বাচন করতেও আগ্রহী ছিলেন সাবেক এই আমলা। গত কয়েক বছরে টেলিভিশনের আলোচনা অনুষ্ঠানে তাকে দেখা যেত।

এসএস