নির্বাচনের প্রস্তাবিত তারিখ দেশের বাইরে থেকে ঘোষণা সরকারকে বিতর্কিত করেছে: রাশেদ প্রধান

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সহসভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান
দেশে এখন
0

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তাবিত তারিখ দেশের বাইরে থেকে ঘোষণা করা সরকার ও একটি রাজনৈতিক দলের যৌথ বিবৃতি আমাদেরকে বিস্মিত করেছে। এ ধরনের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কৃতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিতর্কিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)-এর সহসভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান।

আজ (শুক্রবার, ২০ জুন) দুপুরে পঞ্চগড় জেলা কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

রাশেদ প্রধান বলেন, ‘গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। বিলম্বে হলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রথমে এপ্রিল এবং পরবর্তীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর রমজানের আগে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তাবিত সময় নির্ধারণ করেছে। যদিও ফেব্রুয়ারির বিষয়টি শর্তসাপেক্ষে বলা হয়েছে, তবুও বিএনপি ও অন্তর্বর্তী সরকার; এই দুই পক্ষের মধ্যে যে সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছিল, আমরা সেখান থেকে কিছুটা হলেও বেরিয়ে আসতে পেরেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই; নির্বাচনের পূর্বে প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক সংস্কার হতে হবে। গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিচার করতে হবে। সন্ত্রাসী, অপরাজনৈতিক ও অশুভ শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদকে প্রতিহত করতে হবে। অন্যথায়, আমরা যে নির্বাচন পাব তা হবে আগের মতোই লোক দেখানো ও গতানুগতিক। বিগত তিনটি নির্বাচনের ফলাফল পূর্বনির্ধারিত ছিল; আওয়ামী লীগ ও ভারতের মধ্যেই ঠিক হয়েছিল। ফলে জনগণ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এখন জনগণ অধীর আগ্রহে ভোট দিতে চায়। এজন্য প্রয়োজন উৎসবমুখর পরিবেশ ও একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। আমরা আশা করি, আগামী নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য এবং ভারতীয় প্রভাবমুক্ত।’

তিনি বলেন, ‘সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কার, নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং বিচার; এই তিনটি বিষয় একসাথে এগিয়ে নিতে হবে।’

সীমান্ত ইস্যুতে রাশেদ প্রধান বলেন, ‘সীমান্তবর্তী জেলা হিসেবে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরও ভারতের বিএসএফ কর্তৃক পঞ্চগড়ের মানুষকে নির্মমভাবে হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। ভারতের ক্রমাগত পুশ ইন আমাদের জন্য আশঙ্কাজনক। দিল্লির সেবাদাস শেখ হাসিনার গদি হারিয়ে বাংলাদেশকে রাজ্য বানাতে না পেরে এখন পুশ ইনের আশ্রয় নিচ্ছে। আমরা আশঙ্কা করছি, বিএসএফ পুশ ইনের মাধ্যমে বাংলাদেশি, রোহিঙ্গা ও ভারতীয় সন্ত্রাসীদের ঢুকিয়ে দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিজিবিকে আরও জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই।’

তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি উদারতা ও সহনশীলতার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা জাতিগতভাবে একে অপরকে দোষারোপ করতে পছন্দ করি, একে অপরের মত শুনতে চাই না, সম্মানও করি না। বিএনপি ও জামায়াত একসময় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন করেছে, এখন চলছে কাদা ছোড়াছুড়ি। এনসিপির সঙ্গেও তাই হচ্ছে। নতুন বাংলাদেশে এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

পেশাজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক, সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচারক; এই চার শ্রেণির মানুষ যেন দেশের স্বার্থে নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করেন।’

নিজ দল সম্পর্কে রাশেদ প্রধান বলেন, ‘আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জাগপা সাংগঠনিক জেলাগুলোতে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছে। জোটগতভাবে না হলে, আমরা দলীয় প্রতিকে পঞ্চগড়ে নির্বাচনে অংশ নেব। আমি ৪৩টি ইউনিয়নে গিয়েছি, ৫০টিরও বেশি বাজারে মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। জাগপা ও প্রধান পরিবারের প্রতি পঞ্চগড়বাসীর ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে ও দায়িত্বশীল করেছে। আমি আমার দাদা, সাবেক স্পিকার গমির উদ্দিন প্রধান এবং বাবা, জাগপার প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম প্রধানের মতোই পঞ্চগড়ের মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকার করছি।’

এসময় উপস্থিত ছিলেন জাগপার পঞ্চগড় জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনছার আলী, সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার আলম বিপ্লব, সহসভাপতি শামসুজ্জামান নয়ন ও মফিদার রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন পাটোয়ারী, যুব জাগপার আহ্বায়ক কামরুজ্জামান কুয়েত এবং জাগপা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদত হোসেন সেলিম প্রমুখ।

ইএ