নোয়াখালীতে টানা বৃষ্টিতে জেলা শহর মাইজদি, সদর, সুবর্ণচর, কবিরহাট ও কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা যায়। মাইজদির প্রধান সড়ক ছাড়া প্রায় সব সড়ক তলিয়ে যায় পানিতে। ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়ে। পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষুব্ধ গত ৪ দিন ধরে পানিবন্দী থাকা মানুষ। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যেসকল পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন তাদের অভিযোগ এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার সহযোগিতাই পাননি তারা।
তবে আগের তুলনায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় নামতে শুরু করেছে পানি। জেলায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৪১ হাজার ৮৪০টি পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত ২ লাখ ৩ হাজার ১০০ মানুষ। বিধ্বস্ত হয়েছে ৪০ ঘরবাড়ি। জলাবদ্ধতায় আউশ, আমনের বীজতলা, সবজি খেতসহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমির।
স্থানীয় অধিবাসীরা বলেন, ‘আমাদের জেলাগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। সামনের দিনে আমরা কিভাবে চাষ করতে পারবো সে ব্যবস্থাই চাই আমরা। ছোট থেকে বড় সব ধরনের মাছও ভেসে গেছে আমাদের।’
জেলায় প্রস্তুত রাখা ৪৬৬টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দেড় হাজার মানুষের ঠাই হয়েছে ৪০টি আশ্রয় কেন্দ্রে। তবে ৪ দিন পার হলেও সরকারি ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করছেন আশ্রিত মানুষরা।
তারা জানান, গত ৪ দিন ধরে তাদের সাথে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করেনি। সরকারের পক্ষ থেকে কোন সাহায্য পাচ্ছেন না তারা। কোন উপায় না থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন কিন্তু এখানেও খাবারের কষ্ট করতে হচ্ছে বলে জানান বাসিন্দারা।
এদিকে, ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ফেনীতে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে ২২টি স্থানে বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে এখনও পানি ঢুকছে শতাধিক গ্রামে। পানি বাড়ছে ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া ও দাগনভূঞাঁ উপজেলায়। বন্যায় নষ্ট হয়েছে আউশ ধানের বীজতলা, সবজিসহ পোল্ট্রি খাত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলার ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবে গেছে। মৎস্য বিভাগ বলছে, ১ হাজারের বেশি পুকুর প্লাবিত হয়েছে। মৎস্য খাতে ক্ষতি ৫ কোটি টাকার বেশি।
ফেনী জেলা মৎস্য অফিসার আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী উপজেলায়। আর্থিক ক্ষতি হয়েছেই আনুমানিক প্রায় ৫ কোটি টাকার মতো।’
বন্যার পানি ঘর-বাড়ি থেকে নামতে শুরু করলেও এখনও ভোগান্তিতে স্থানীয়রা। এখনো ৮০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত। পানিবন্দী রয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ।
এছাড়া কুমিল্লায় উজানের ঢল, অতিবৃষ্টিতে চৌদ্দগ্রাম, সদর দক্ষিণ, আদর্শ সদর, বুড়িচং এলাকার জলাবদ্ধতায় ১৩ হাজার হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে। বন্যার আশঙ্কা দেখা দিলেও বৃষ্টি কমে যাওয়ায় গোমতী নদীর পানি কমেছে ৭৪ সেন্টিমিটার।