বুধবার সন্ধ্যা। মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর ফটকের সামনের দৃশ্য এটি। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় বস্ত্রহীন রক্তাক্ত দেহের উপর এমন অবর্ণনীয় হামলা। লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ নামের একজন ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা হার মানাবে মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও। অভিযোগ উঠেছে এই হত্যার পেছনে রয়েছেন যুবদল নেতা পরিচয়দানকারী মাহমুদুল ইসলাম মহিন ও তার দলবল। দীর্ঘদিন ধরে সোহাগের ভাঙ্গারী ব্যবসা দখলের চেষ্টার অভিযোগ আছে মহিনের বিরুদ্ধে।
সিসিটিভির এই ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় দেশব্যাপী সমালোচনা। এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেখে শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। স্লোগানে স্লোগানে হত্যাকাণ্ডের সর্বোচ্চ বিচারের দাবি করেন তারা। মিছিলটি হল পাড়া প্রদক্ষিণ করে ভিসি চত্বর গিয়ে শেষ হয়।
এসময় দেশের বিভিন্নস্থানে হত্যা, চাঁদাবাজি, ধর্ষণসহ সব অপরাধের বিচার দাবি করেন তারা। অভ্যুত্থানের এক বছরেও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি না হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করেন বিক্ষোভকারীরা।
এ সময় তারা বলেন, ‘চাঁদা না দেয়ার কারণে পাথর মেরে আইয়্যেমে জাহিলিয়াতের মতো হত্যা করা হয়েছে। নতুন বাংলাদেশকে আমরা আর কোন চাঁদাবাজ, হত্যাকারীর হাতে তুলে দিতে পারি না। মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে দ্রুত তার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই না, রাতে বিক্ষোভ মিছিল করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। মিছিলে ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, আপ বাংলাদেশের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। স্লোগানে স্লোগানে বিচারের দাবি তোলেন তারাও। পরে বিক্ষোভ মিছিল করে ইসলামী আন্দোলনও। এছাড়া রাতে বুয়েট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন এর শিক্ষার্থীরা। পরে সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে শেষ হয়। এসময় নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার, সারাদেশে চাঁদাবজি বন্ধসহ ৫ দাবি তুলে ধরেন তারা।
এ সময় তারা বলেন, ‘অভিযুক্ত মাহিন, রবিনসহ সকল খুনিকে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সারাদেশে চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রাজনৈতিক পরিচয়ের অপব্যবহার করে অপরাধীদের রক্ষা করার সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’
এদিকে, এ ঘটনায় অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতার আনার দাবি নিয়ে কোতোয়ালি থানায় যান এনসিপির কয়েকজন নেতাকর্মী। অভিযুক্তরা যাতে রাজনৈতিক পরিচয়ে ছাড় না পায়, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সেই দাবি জানান তারা।
এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘অপরাধী যত শক্তিশালী শেল্টারেই থাকুক না কেন, তার পেছনে যেই রাজনৈতিক পরিচয় থাকুক না কেন, তাকে অবিলম্বে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। গ্রেপ্তার করতে হবে। আমরা এলাকাবাসীকে নিয়ে চাঁদাবাজি এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবো।’
ব্যবসায়িক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সোহাগকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শুক্রবার কোতোয়ালী থানায় মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যেই চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরমধ্যে একজনকে ৫ দিন আরেকজন ২ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া এ ঘটনায় যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নেতা রজ্জব আলী পিন্টু ও মহানগর দক্ষিণ যুবদলের নেতা সাবাহ করিম লাকিকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। অভিযুক্ত আরেকজনকে আজীবন বহিষ্কার করেছে স্বেচ্ছাসেবক দল।