সকলকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠন করতে চায় বিএনপি: তারেক রহমান

ময়মনসিংহ
জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী দলের প্রতিনিধি সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন তারেক রহমান
এখন জনপদে
রাজনীতি
0

বাংলাদেশ বহুজাতি, বহুভাষী সব মানুষের। সকলকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠন করতে চায় বিএনপি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ময়মনসিংহে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী দলের জাতীয় প্রতিনিধি সমাবেশে ভার্চুয়াল যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি। এদিকে একই সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, উগ্রবাদের কথা বলে দেশকে বিভক্ত করতে চায় একটি গোষ্ঠী।

ময়মনসিংহে জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী দলের প্রতিনিধি সমাবেশের শুরুতেই ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শুভেচ্ছা জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ঐতিহ্যবাহী নাচে-গানে তারেক রহমানকে বরণ করেন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিল্পীরা।

সমাবেশে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতারা বলেন, ইকো পার্ক প্রকল্প বা বন রক্ষার নামে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা চলছে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয়, পৃথক ভূমি কমিশন এবং সংসদে সংরক্ষিত আসন নিশ্চিতের দাবি জানান তারা।

সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নতুন বাংলাদেশে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার সমান। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটি পক্ষ নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত করছে।

তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটি আনন্দের, কারণ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে জাতীয়তাবাদের দর্শন জাতির সামনে উপস্থাপন করেছিলেন, তার আলোকে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলো আজ একত্রিত হয়েছে। তারা উন্নয়নমূলক কাজে অন্তর্ভুক্ত হতে চায়।’

তিনি বলেন, ‘দানবীয় ফ্যাসিস্ট সরকারের দীর্ঘ নির্যাতনের শাসনের পর আমরা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ পেয়েছি। এই বাংলাদেশে সব নাগরিকের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। আমার নেতা ও আমাদের ম্যাডাম সবসময় বলেন- ‘সংখ্যালঘু’ বলে কোনো শব্দ ব্যবহার করা যাবে না, আমরা সবাই বাংলাদেশি, আমাদের অধিকার সমান।’

তিনি বলেন, ‘অতীতে সবসময় সুবিচার করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা বিশ্বাস করি, তারেক রহমানের নেতৃত্বে প্রণীত ৩১ দফাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির মূল চাবিকাঠি। এর মধ্যে রেইনবো বাংলাদেশের ধারণা রয়েছে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়েই আমরা সত্যিকারের রেইনবো স্টেট গড়তে চাই।’

বিএনপি সরকার গঠন করলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ট্রাইবাল ট্রাস্ট গঠন, তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ এবং নারীদের অধিকার নিশ্চিতসহ চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করার কথা জানান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এসময় আগামী জাতীয় নির্বাচনে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সমর্থন ও সহায়তা চান তিনি।

তারেক রহমান বলেন, ‘স্বৈরাচারী আমলে হামলা-নির্যাতন উপেক্ষা করেও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। বর্তমানে স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে প্রতিটি মানুষের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ সামনে এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যেই নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করেছে। বিএনপি ঘোষিত সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা এবং দল-মত-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকলের জন্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সক্রিয় সমর্থন ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘১৯৭৬-৭৭ সালের দিকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে একাধিকবার মতবিনিময় করেছিলেন। তখন তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন এবং সাংস্কৃতিক চর্চার বিকাশের লক্ষ্যে বিরিশিরি কালচার একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘এছাড়াও গারো জনগোষ্ঠীর জন্য ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন গঠন, রেডিওতে ‘সাল গীতা’ অনুষ্ঠান চালু, ছাত্র হোস্টেল নির্মাণ, সরকারি চাকরিতে বিশেষ নিয়োগ এবং উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। এর মাধ্যমে সমতলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর সঙ্গে শহীদ জিয়ার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা আজও ময়মনসিংহে স্মৃতি বিজড়িত ইতিহাস।’

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও কর্মদক্ষতা অর্জনের সুযোগ গ্রহণ করা জরুরি। নিজেদের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার চর্চা ও প্রয়োগের ক্ষেত্রেও সক্রিয় থাকতে হবে। শিক্ষাদীক্ষা অর্জনের পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধভাবে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে হবে এবং রাষ্ট্র-রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এ লক্ষ্য নিয়েই ২০০৭ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ আগ্রহে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে সংঘবদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তার ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বিএনপির অস্থায়ী সহযোগী সংগঠন হিসেবে জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু হয়। আজকের প্রতিনিধি সম্মেলন তারই প্রতিফলন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক সক্রিয়তা ও বিশ্বাস অক্ষুণ্ণ রেখেই বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেদের ও আগামী প্রজন্মের গণতান্ত্রিক অধিকার, স্বাবলম্বিতা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা জরুরি। প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর কাছে সরকার বা রাষ্ট্রের গৃহীত শিক্ষা ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পৌঁছে দেওয়া এবং তাদের সচেতন রাখা নেতৃত্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। পাহাড়ি বা সমতলে বসবাসকারী প্রত্যেক জনগোষ্ঠী যদি নিজের ও দেশের স্বার্থ সম্পর্কে সচেতন থাকে, তবে কোনো অপশক্তি বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুযোগ পাবে না।

তারেক রহমান বলেন, ‘দেশের সমতল ও পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত। এর মধ্যে সমতল অঞ্চলের ৬টি বিভাগের ৪২ জেলায় প্রধানত ৩৭টি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর বসবাস। পাহাড়ি অঞ্চলে আরও কয়েকটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী রয়েছে। এভাবেই বহু জাতি, বহু ভাষা ও বহু সংস্কৃতির মানুষের দেশ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।’

জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মৃগেন হাগিদকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ, ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলাম, উত্তর জেলা আহ্বায়ক অধ্যাপক একেএম এনায়েত উল্লাহ, দক্ষিণ জেলা আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু, সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান সরকার রোকন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব দ্রং, আদিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রমোদ চন্দ্র বর্মনসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এদিকে ১১ বছর পর নেত্রকোণায় অনুষ্ঠিত হলো জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। শনিবার সকাল থেকেই সম্মেলন কেন্দ্রে আসতে থাকেন নেতাকর্মীরা। ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে যায় সারা শহর। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

এসময় সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কোন ষড়যন্ত্রই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। নির্বাচিত সরকার অসমাপ্ত সংস্কার বাস্তবায়ন করবে বলেও জানান তিনি। নেত্রকোণার ১০টি উপজেলার প্রায় ৮ হাজার নেতাকর্মী অংশ নেয় সম্মেলনে।

এএইচ