ভোলায় দালালের খপ্পরে নিঃস্ব শতাধিক পরিবার

ভুক্তভোগীর পরিবার, মানববন্ধন
এখন জনপদে
0

ভোলার দৌলতখান উপজেলায় বিদেশে যাওয়ার নামে প্রতারণার ফাঁদে নিঃস্ব হয়েছে শতাধিক পরিবার। দালাল চক্রের খপ্পরে বিদেশে চাকরি না পেয়ে দেশে ফিরেছেন অনেকে। কেউ আবার খেটেছেন জেল, এমনকি অনেকের হদিস পাচ্ছেন না স্বজনরা। ভুক্তভোগীদের আইনের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ স্থানীয় প্রশাসনের।

ভোলার দৌলতখানের চরশুভী গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা হাসান বানু। তিন বছর আগে ছোট ছেলে মোসলেউদ্দিনকে স্থানীয় নাজিমুদ্দিন ও হেলালের মাধ্যমে পাঠিয়েছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাইতে। ভালো চাকরি আর সুযোগ-সুবিধার কথা থাকলেও কোনটি মেলেনি। দুবছর কোন রকম কাটলেও শেষমেশ ঠাঁই হয়েছে দুবাইয়ের কারাগারে। অভাবের সংসারে ছেলের রেখে যাওয়া চার সন্তান, স্ত্রী ও অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে বিপাকে এই বৃদ্ধা।

হাসান বানু বলেন, ‘আমার ছেলেরে আমি চাই, আমি টাকাও চাই না, পয়সাও চাই না। বিদেশও আমার আর লাগবে না। আমি যে কীভাবে এই সংসার চালাই এটা কেউ দেখে না।’

স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চরশুভী গ্রামের নাজিম উদ্দিন, কাসেম, হেলাল আর নুর উদ্দিন মিলে গড়ে তুলেছেন মানবপাচার ব্যবসার চক্র। দুবাই, ওমান, কুয়েত, কাতারে—চাকরি দেয়ার কথা বলে গেল ছয় বছরে শতাধিক ব্যক্তিকে ফাঁদে ফেলেছেন। কিন্তু বিদেশে ভালো চাকরির বদলে ভুক্তভোগীদের কপালে জুটেছে নির্যাতন ও অত্যাচার। আর এই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজনের স্ত্রী বলেন, ‘তিনজন মানুষ আমার স্বামীকে নিয়ে জেলে আটকে রাখছে। আগে ১০ লাখ টাকা দিয়েছি, বলছিল ছেড়ে দেবে, সেটাও মার দিয়ে দিয়েছে।’

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘এই দালালদের খপ্পরে পড়ে যারা আজকে নির্যাতিত, টাকা-পয়সা দিতে পারে না বাড়িতে। তাদের যেন দ্রুত আইনের আওতায় না হয়।’

তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিনের বক্তব্য পাওয়া না গেলেও তার স্বজনরা তাকে নির্দোষ দাবি করেন।

নাজিম উদ্দিনের স্বজনদের মধ্যে একজন বলেন, ‘দেখেন, জানেন যে আসলেও কি গুম নাকি। কোম্পানি খুলতে গিয়ে দ্বন্দ্ব হয়েছে। এখন দোস দিচ্ছে।’

চক্রটির প্রতারণা বন্ধ ও দোষীদের বিচার দাবিতে ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনরা মানববন্ধন করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, এ ধরনের প্রতারণা রোধে দরকার ব্যাপক সচেতনতা আর প্রশাসনের কঠোর নজরদারি।

ভোলার সুজনের সদস্য অ্যাড. সাহাদাত শাহীন বলেন, ‘উচ্চ বেতনের চাকরি দেয়ার লোভ দেখিয়ে নিরীহ সাধারণ মানুষকে ভিটামাটি বিক্রি করে বিদেশে যেতে বাধ্য করছে। তাদেরকে রক্ষা করতে হবে। রক্ষা করার জন্য সরকারের অতিদ্রুত আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া ভুক্তভোগীদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আইনি সহায়তা চেয়ে আবেদন করার পরামর্শ তার।

ভোলার দৌলতখানের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়তি রাণী কৈরী বলেন, ‘যারা ভিক্টিম আছেন, তারা যেন যথাযথভাবে আমাদের কাছে আবেদন করেন এবং আমরা এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

দালাল চক্রের খপ্পরে নিরীহ মানুষের উন্নত জীবনের স্বপ্ন প্রতিনিয়ত দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে। তাই অবৈধ মানবপাচার রোধ ও প্রতারণা বন্ধে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের প্রত্যাশা ভুক্তভোগী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের।

এসএস