স্রোতের তোড়ে ডুবছে সিলেটের গ্রাম, স্থানীয়দের দুর্ভোগ

সিলেটের বন্যা
এখন জনপদে
0

স্রোতের কাছে হার মানছে স্থানীয়দের প্রাণপণ চেষ্টা। কুশিয়ারা নদীর বাঁধ উপচে সিলেটের জকিগঞ্জের বেশ কয়েকটি গ্রামে ঢুকছে পানি। প্রতিবছর ঢলের পানিতে এমন দুর্ভোগে প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দুষছেন এলাকাবাসী। বিপৎসীমার ওপর দিয়ে কুশিয়ারার পানি বইছে, এমন যুক্তি দেখিয়ে দায় সেরেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আর স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, বন্যা মোকাবিলায় নেয়া হয়েছে সব প্রস্তুতি।

উজানের ঢল এবং ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট প্লাবন থেকে বাঁচতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন জকিগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রামবাসী। শুধু রারাই গ্রাম নয়, বরং সদর ইউনিয়নের মোমিনপুর, মানিকপুর, পলাহাটসহ মোট ২০টি গ্রামে ঢুকছে বানের পানি। চরম দুর্ভোগে এলাকার হাজারো মানুষ।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের রাস্তাঘাট বাড়িঘরে অনেক পানি ঢুকে গেছে। যাদের নিচু অঞ্চলে বাড়ি তাদের বাড়ি পুরোটাই ডুবে গেছে।’

হঠাৎ বানের জলে তলিয়ে যাওয়া গ্রামবাসীর অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের অবহেলায় প্রতিবছর ভারী বৃষ্টিপাত এবং উজানের ঢলে বন্যায় প্লাবিত হয় উপজেলার প্রায় অর্ধশত গ্রাম।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, সুরমা ও কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বেশ কয়েকটি বাঁধ উপচে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে পানি নেমে গেলে বাঁধ সংস্কারে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার কথা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, ‘জকিগঞ্জ, কানাইঘাট ও বিয়ানিবাজার এলাকায় কুশিয়ারা নদীর পানি উপচে লোকালয়ে কিছুটা প্রবেশ করছে, বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে ভারতে যেহেতু বৃষ্টিপাত কমে যাচ্ছে, আশা করা যায় দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে।’

এদিকে, জকিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম এবং পৌর এলাকায় পানিবন্দি মানুষের দুর্দশা লাঘবে এবং স্থায়ী বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৫৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় পানি উপচে কিছু পানি ঢুকছে। অতিবৃষ্টির কারণে কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। আমাদের ৫৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে, শুকনো খাবার আছে। আমাদের কন্ট্রোল রুম খোলা আছে, যেকোনো পরিস্থিতিতে যে কেউ আমাদের সহযোগিতা পাবেন।’

এ ছাড়া, জেলার যেকোনো উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে উদ্ধার কার্যক্রম এবং ত্রাণ সহায়তা প্রদানে জেলা প্রশাসনের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান সিলেটের জেলা প্রশাসক। একইসঙ্গে জেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫৮৭টি আশ্রয়কেন্দ্র।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘এরকম বর্ষণ অব্যাহত থাকলে যদি বন্যা দীর্ঘসময় থাকে, সেক্ষেত্রে আমাদের যে আশ্রয়কেন্দ্র আছে, সেগুলোর মাধ্যমে সেবা দেয়ার চেষ্টা করবো। যারা নিজ নিজ জায়গায় থাকবেন, তাদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত জনযান এবং স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রেখেছি।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, সিলেটের ১১টি পয়েন্টের মধ্যে মোট চারটি পয়েন্টে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও বাকি ৬ থেকে ৭টি পয়েন্টের পানিও বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই।

এসএস