টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা পৌর এলাকার বেশিরভাগ নিচু অঞ্চল এখন পানির নিচে। কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর সমান পানি। রাস্তাঘাটেও চলাচল হয়ে পড়েছে দুর্বিষহ। জেলা পুলিশ লাইনস, ফায়ার সার্ভিস, সদর উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন সরকারি অফিস চত্ত্বরেও জমে আছে পানি।
জলাবদ্ধতার ভয়াবহ চিত্র সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে পৌরসভার সুলতানপুর, কামালনগর, মধুমোল্লারডাঙি, রসুলপুর, গদাইবিল, পার-মাছখোলা, ইটাগাছা, পলাশপোল ও বদ্দিপুর কলোনির মতো এলাকায়। এসব ওয়ার্ডের অলিগলি, স্কুল, বাজার, এমনকি বাড়ির উঠোনেও জমে আছে হাঁটু সমান পানি। রাস্তায় চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে শিশু থেকে বৃদ্ধরা। পানি জমে থাকায় কোথাও ভেঙে গেছে রাস্তা। সবচেয়ে নাজুক অবস্থা পৌরসভার ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘আমাদের ঘুম, খাওয়া, চলাচল, কাজ সব বন্ধ হয়ে আছে। বিগত ৬ থেকে ৭ বছর ধরেই এখানে পানি জমে। অল্প বৃষ্টিতেই এখানে পানি জমে যায়। আমরা বের হতে পারছি না। আমাদের খাবারের সমস্যা হচ্ছে।’
পৌরসভার বাইরেও জলাবদ্ধতায় ভুগছে সদর উপজেলার ধুলিহর, ভোমরা, লাবসা ও ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের অনেক এলাকা। গত ১৫ দিন ধরে পানিবন্দী মানুষ। বর্তমানে পৌরসভায় কোনো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নেই। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও কোনো খোঁজ নেয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
তারা বলেন, ‘রাস্তায় পানি জমার কারণে আমরা গাড়ি চালাতে পারছি না। ব্যাটারিতে পানি ঢুকে যাচ্ছে। টায়ার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পৌরসভার চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে জানানো হয়েছে। তারা এসে শুধু দেখেই চলে যায়। কোন ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি।’
নাগরিক কমিটির নেতারা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বন্ধ স্লুইস গেট এবং প্রভাবশালীদের মাছের ঘের জলাবদ্ধতার মূল কারণ। এ বিষয়ে প্রশাসনও কোন উদ্যোগ নেয়নি।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আলী নূর খান বাবুল বলেন, ‘জলাবদ্ধতার সবচেয়ে বড় কারণ হলো ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা এবং জেলার পশ্চিম ও পূর্ব পাশে অপরিকল্পিত চিংড়ির ঘের থাকা।’
এদিকে জলাবদ্ধতার মূল কারণ হিসেবে দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে দায়ী করলেন পৌরসভার প্রশাসক। জানান সমস্যা সমাধানে প্রকল্প চলমান রয়েছে। তারপরও ২৭ কোটি টাকার একটি মাস্টারপ্ল্যান স্থানীয় সরকার সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে।
সাতক্ষীরা পৌরসভার স্থানীয় সরকার ও প্রশাসক উপ-পরিচালক মাশরুবা ফেরদৌস বলেন, ‘পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণে প্রতিবারই আমাদের জনগণ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। আমরা একটি জার্মান ফান্ডের সহযোগিতায় সাতক্ষীরা পৌরসভায় ৫ কোটি টাকার ড্রেনের কাজ চলমান রেখেছি।’
সাতক্ষীরায় জলাবদ্ধতা এখন যেন প্রতিবছরের নিয়তি। উন্নয়ন প্রকল্পের আশ্বাস মিললেও বাস্তবায়ন না হলে বদলাবে না জনজীবনের চিত্র। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিকল্পিত নগরায়ন, টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও নদী-খাল খননই এই দীর্ঘস্থায়ী দুর্ভোগ থেকে মুক্তির পথ।