সাতক্ষীরায় বজ্রপাত আতঙ্ক; বাড়ছে মৃত্যুর ঝুঁকি

সাতক্ষীরা
বজ্রপাত
পরিবেশ ও জলবায়ু , আবহাওয়ার খবর
এখন জনপদে
0

এখন কেবল প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে বজ্রপাত হয়ে উঠেছে নিয়মিত প্রাণহানির কারণ। সাতক্ষীরায় প্রতি বছরই ঘটছে বজ্রাঘাতে মৃত্যুর ঘটনা। খোলা মাঠ, ফাঁকা বিল আর মাছের ঘের সব জায়গায় বজ্রপাত আতঙ্ক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাড়ছে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঝুঁকি।

গেলো ২১ এপ্রিল সাতক্ষীরায় খেত থেকে ধান কেটে বাড়ি আনার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন অমিত্তবান আরাসহ বেশ কয়েকজন। হঠাৎ বজ্রপাতে মাঠেই মৃত্যু হয় অমিত্তবানের। আহত হন খুকুমনি নামে আরো এক নারী শ্রমিক। আর ৬ মে বাবার সাথে ধান আনতে গিয়ে বজ্রপাতে প্রাণ হারান দেবহাটা উপজেলার পাপড়াতলা গ্রামের দেবব্রত ঘোষ।

নারী শ্রমিক খুকুমনি বলেন, ‘আমরা দু’জন পড়ে গেলাম। এরপর সবাই আমাদের তুলে হাসপাতালে নিয়েছে এবং আমাদের চিকিৎসা করা হয়েছে। সুস্থ হয়ে জানলাম আমার পেছনে যে ছিল সে মারা গেছে।’

নিহতের মেয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মজুরি খেটে কোনোরকমে সংসার চালাতো, আর এখন তিনি না থাকায় সংসারই ঠিকমত চলে না।’

এপ্রিল থেকে জুন এই ৩ মাস সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। ঝড়-বৃষ্টির সময় খোলা মাঠ, আর মাছের ঘেরে থাকা মানুষ থাকেন সবচেয়ে ঝুঁকিতে। গত তিন বছরে এমন ঘটনায় মৃত্যু বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে।

মাঠে কাজ করা মানুষদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমরা মাঠে কাজ করি, ঝড় বৃষ্টির সময়ে দৌড়ে বাড়ির দিকে আসি। আশপাশে কোনো ছাউনি নেই যার নিচে আশ্রয় নেব।’

আবহাওয়াবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেড়েছে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঝুঁকি। তাই জীবন বাঁচাতে প্রয়োজন সময়মত তথ্য ও নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা।

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আ ন ম গাউছার রেজা বলেন, ‘এলোমেলোভাবে বনায়ন না করে আমরা যদি পরিকল্পিতভাবে বনায়ন করি, কিছু সুনির্দিষ্ট উঁচু বৃক্ষ লাগাই, তাহলে এগুলোর মধ্যে দিয়েই বিদ্যুৎ পাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এতে ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা কমে যাবে।’

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন বলেন, ‘পানি বিদ্যুৎ পরিবাহী। সেজন্য পানিতে যদি বজ্রপাত হয় তাহলে এই পানির সংস্পর্শে যদি কেউ থাকে তাহলে তারাও বিদ্যুতায়িত হয়। সেক্ষেত্রে ঘের এলাকায় থাকলে পানি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে এবং আশপাশের বড় গাছগাছালি থেকে দূরে থাকতে হবে।’

সরকারের পক্ষ থেকে বজ্রপাতে মৃত্যু ও ক্ষতি মোকাবিলায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় তালগাছ রোপণ, স্কুল-কলেজে সচেতনতা সভা এবং মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের জন্য সতর্কতা বার্তা প্রচারের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া ফসলের মাঠে বজ্রপাত থেকে বাঁচতে ঘর বা ছাউনি বানানোর কাজ চলছে বলে জানান জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা।

সাতক্ষীরার জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হলো সচেতনতা বৃদ্ধি করা। তাছাড়া কৃষক ছাউনি তৈরি করার জন্যও সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। অনেক জায়গায় তৈরি হয়েছেও। সাতক্ষীরাতেও কিছু তৈরি হয়েছে দেখেছি।’

সতর্কতা ব্যবস্থা থাকলেও তা অনেক সময় গ্রামের মানুষ সময়মত পান না। আর যে ক'টি আশ্রয়কেন্দ্র আছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ফলে জীবন আর জীবিকার এই দ্বন্দ্বে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে মাঠে নামছেন হাজারো মানুষ। সতর্কতা মানলেই বাঁচতে পারে প্রাণ। প্রয়োজন স্থানীয় প্রশাসনের আরও তৎপরতা ও জনগণের সচেতনতা।

এসএইচ