ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালে ইসরাইল ভূ-খণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্রের বহর ছুড়েছিল তেহরান। টানা ১২ দিনের যুদ্ধে ইসরাইলের ভূ-খণ্ড লক্ষ্য করে ৫ শতাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পাঠায় ইরান। তবে ইরানের পাঠানো এসব ক্ষেপণাস্ত্রের বেশিরভাগই আটকে যায় ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জালে।
মধ্যপ্রাচ্যের ইহুদি এ অঞ্চলে যেকোনো সময় বড় ধরনের হামলা হতে পারে তা আগে থেকেই জানে ইসরাইল। তাই নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষা জোড়ালো করতে আপ্রাণ চেষ্টা তাদের। বিশেষ করে ১৯৯১ সালে গালফ যুদ্ধের পর থেকে টনক নড়ে ইসরাইলিদের। সেসময় যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে অ্যান্টি মিসাইল সহায়তা পাঠায়।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সাল থেকে সর্বপ্রথম ইসরাইল তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম চালু করে। এটিও মার্কিন সহায়তায় রাষ্ট্রীয়ভাবে রাফায়েল অ্যাডভ্যান্স ডিফেন্স সিস্টেমের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। রাডারের সাহায্য যা স্বল্প দৈর্ঘ্যের রকেট, মর্টার ও ড্রোন ধ্বংস করতে সক্ষম।
ইসরাইলের নিরাপত্তা বিশ্লেষক উজি রুবিন বলেন, ‘২০০৬ সালে লেবানন যুদ্ধের পর থেকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দিকে মনোযোগী হয়েছে ইসরাইল। এটি নিয়ে শুরুতে সামরিক কর্মকর্তা ও বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা যায়। তবে তখনকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে কাজ শুরু করে।’
ইসরাইলের এ বিশ্লেষক জানান, যখনই শত্রুপক্ষ তাদের লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র বা ছোড়ে, তখনই এর গণনা শুরু করা হয়। সে অনুযায়ী আয়রন ডোমকে নির্দেশনা দেয়া হয় রকেট ছুড়তে। তেড়ে আসা রকেট বা ক্ষেপণাস্ত্রকে লক্ষ্য করে পাল্টা আক্রমণ করে আয়রন ডোম।
ইসরাইলের বেসামরিক নাগরিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষায় পুরো ইসরাইলজুড়েই বসানো হয় আয়রন ডোম। আর এসব আয়রন ডোমের মাধ্যমে এক একটি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে খরচ হয় প্রায় ৫০ হাজার ডলার। তবে এ খরচ কমিয়ে আনতে কাজ করছে তেল আবিব সরকার।
ইসরাইলের নিরাপত্তা বিশ্লেষক উজি রুবিন বলেন, ‘আকাশ প্রতিরক্ষাকে সাশ্রয়ী করে তোলা ছিল অন্যতম উদ্দেশ্য। তবে এর উৎপাদন খরচ প্রায় ৫০ হাজার ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে এ ধরণের ক্ষেপণাস্ত্রের দাম আরো বেশি। তাই এটিকে যতটা সম্ভব খরচ কমিয়ে আনাই লক্ষ্য ছিল।’
ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষায় আয়রন ডোমের পাশাপাশি রয়েছে অ্যারো সিস্টেম ও ডেভিড স্ল্যাং। ইসরাইলকে যখন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত করে ইরান তখনও আয়রন ডোমের পাশাপাশি এ দুই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও সক্রিয় রেখেছে আইডিএফ।
অ্যারো সিস্টেম-টু মূলত হাজার কিলোমিটার দূর থেকে ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বায়ুমণ্ডলেই ধ্বংস করতে পারে। আর অ্যারো সিস্টেম -থ্রি বায়ুমণ্ডল ভেদ করার পর ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সক্ষম।
এ ছাড়াও স্বল্প দৈর্ঘ্যের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র যেমন, ক্রুক মিসাইল ধ্বংস করতে বেশ কার্যকরী ডেভিড স্ল্যাং। শত্রুপক্ষের যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও ক্রুজ মিসাইলও ধ্বংস করে এ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।