যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইতিবাচক হামাস ও ইসরাইল, আশাবাদী যুক্তরাষ্ট্রও

যুদ্ধবিরতির আলোচনার মাধ্যেও গাজায় হামলা করেছে ইসরাইল
বিদেশে এখন
0

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইতিবাচক অগ্রগতির কথা জানিয়েছে হামাস ও ইসরাইল। এ ব্যাপারে আশাবাদী যুক্তরাষ্ট্রও। তবে গাজায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি পরিকল্পনা ও যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যেও একদিনে ৮২ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করলো ইসরাইল। হাসপাতালের সামনে পুষ্টি সহায়তা নিতে এসে ৮ শিশুসহ প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১৬ জন।

গাজার মধ্যাঞ্চলের আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের সামনের দৃশ্য এটি। যেখানে নারী ও শিশুসহ হতাহতরা পড়ে আছে রক্তাক্ত অবস্থায়। হাসপাতালের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা পুষ্টিহীনতায় ভোগা ফিলিস্তিনি শিশুদের ওপর হামলা চালায় ইসরাইলিরা। এতে ৮ শিশু ও ২ নারীসহ প্রাণ হারান বেশ কয়েকজন। এ ধরনের হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদিও ইসরাইলের দাবি, হামাসকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে তারা। বেসামরিক নাগরিক হতাহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তেল আবিব।

এদিকে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস শহরে হামলা জোরদার করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এক সপ্তাহের ব্যবধানে শহরটির শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় তারা। জীবন বাঁচাতে শহর ছেড়ে পালাচ্ছেন বাসিন্দারা।

তারা বলেন, ‘আমরা সবকিছু ছেড়ে চলে এসেছি। আমাদের এখানে অপরাধ কি? আমরা শান্তি চাই। চোখের সামনে আর মৃত্যু দেখতে চাই না।’

ইসরাইলের সমালোচনার অভিযোগে ফিলিস্তিনে নিযুক্ত মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষ দূত ফ্রানচেসকা আলবানিজের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ। এদিকে, তীব্র খাদ্য ও জ্বালানি সংকটে বিপর্যস্ত গাজায় ১৩০ দিন পর প্রথমবারের মতো জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছে জাতিসংঘ। হাসপাতালগুলোকে সচল রাখতে গেল একদিনে প্রায় ৭৫ হাজার লিটার জ্বালানি সরবরাহ করেছে সংস্থাটি। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগণ্য বলে জানান সংস্থার মুখপাত্র।

এমন অবস্থায় গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আশার আলো জাগিয়েছে হামাস ও ইসরাইল। চলমান আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতির কথা জানিয়েছে দুই পক্ষ। হামাসের শর্ত অনুযায়ী গাজা উপত্যকা থেকে আংশিক সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করছে ইসরাইল। উভয় পক্ষই প্রস্তাবিত নতুন চুক্তির বিষয়ে ইতিবাচক। ইসরাইলের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যেই যুদ্ধবিরতি নিয়ে একটি ঘোষণা আসতে পারে।

এ ব্যাপারে আশাবাদী যুক্তরাষ্ট্রও। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, যুদ্ধবিরতির চুক্তির খুব কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছেছে সব পক্ষ।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘যুদ্ধ শেষ করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে জিম্মিদের মুক্ত করা এবং হামাসকে নিরস্ত্র করা। তবে কাতার এবং মিশরের মধ্যস্থতার ৬০ দিনের অস্ত্রবিরতিতে পৌঁছাতে অনেকটা একমত হয়েছে হামাস এবং ইসরাইল। আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে মানবিক সহায়তা সরবরাহের ব্যবস্থা চালু করতে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে। তবে এবার অতীতের পুনরাবৃত্তি হবে না বলে আশা করি।’

এদিকে, গাজায় আগ্রাসন পুরোপুরি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ইসরাইলকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। এডেন উপসাগর, লোহিত ও আরব সাগরে চলাচল করা ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সব ধরনের জাহাজে হামলা অব্যাহত রাখবে তারা।

তবে, এতো আলোচনার মধ্যেও এক মুহূর্তের জন্য হামলা বন্ধ রাখেনি ইসরাইলি বাহিনী। প্রায় ২ বছরের যুদ্ধে ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজার ৯০ শতাংশ ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো। তীব্র খাদ্য, জ্বালানি ও স্বাস্থ্যসেবা সংকটে পড়েছে ফিলিস্তিনিরা।

ইএ