বিশ্ব রাজনীতিতে আলোচনার নতুন ইস্যু ট্রাম্প-মোদি দ্বৈরথ

নরেন্দ্র মোদি ও ডোনাল্ড ট্রাম্প
বিদেশে এখন
0

বিশ্ব রাজনীতিতে আলোচনার নতুন ইস্যু ট্রাম্প-মোদি দ্বৈরথ। রাশিয়া থেকে তেল কেনায় ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক বসানোকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অন্যায্য আচরণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, যেখানে চীন ভারতের থেকে বেশি তেল আমদানি করে, খোদ যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেল ক্ষেত্র কেনার প্রস্তাব দেয়, সেখানে নয়াদিল্লির ওপর ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক চাপানো এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা। এদিকে, ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্কের ধাক্কা সামলাতে অভ্যন্তরীণ বাজার সম্প্রসারণের প্রস্তাব দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

সরাসরি বাক্যালাপ না হলেও শুল্ক ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর। বুধবার (২৭ আগস্ট) থেকে ভারতীয় পণ্যে কার্যকর হওয়া ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক নিয়ে আলোচনার সুযোগ থাকলেও নয়াদিল্লির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় বসেনি ওয়াশিংটন। আর জার্মান একটি গণমাধ্যমের দাবি, গেল কয়েক সপ্তাহে ৪ বার টেলিফোনে চেষ্টা করেও মোদির সঙ্গে কথা বলতে পারেননি ট্রাম্প।

মার্কিন শুল্কের প্রভাবে ভারতের অর্থনীতিতে যে বড় ধাক্কা লাগতে যাচ্ছে তার পূর্বাভাস দিয়েছে খোদ নয়াদিল্লি। গেল অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮৬.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে ভারত।

আরও পড়ুন:

২০২৬ নাগাদ তা ৪৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসার পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে। ৩০ শতাংশ পণ্যে সম্পূর্ণ শুল্কছাড় আর ৪ শতাংশ পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্কারোপের সুযোগ থাকলেও, ৬৬ শতাংশ পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক গুনতে হবে ভারতকে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, শুল্ক ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাশিয়া থেকে অহরহ নানা কাঁচামাল আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো। সম্প্রতি মস্কোর একটি তেলক্ষেত্র কিনে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে মার্কিন কোম্পানি স্ট্যান্ডার্ড অয়েল।

বিশ্লেষকদের অভিযোগ, রাশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করে চীন-অথচ শুল্কারোপের বেলায় চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে ভারতকে। বেইজিংয়ের ওপর শুল্কারোপের বেলায় চীন-রাশিয়া সম্পর্ক নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি ওয়াশিংটন। তাহলে নয়াদিল্লির বেলায় কেন মস্কোর তেল বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াচ্ছে- এমন প্রশ্নও তুলছেন তারা।

গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, ‘চীন আরও বড় ক্রেতা। তবুও ভারতকে টার্গেট করা হচ্ছে। এটি সম্পূর্ণ অন্যায্য। ট্রাম্প প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা এটা ভালোই জানেন। এ নিয়ে বারবার প্রশ্ন করা হলেও তারা কোনো গ্রহণযোগ্য উত্তর দিতে পারেননি। এই চুক্তির ন্যায্যতা প্রমাণ করতেও ব্যর্থ হয়েছেন। আশা করছি তারা অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কের যৌক্তিকতা পুনর্বিবেচনা করবে এবং দ্রুত তা প্রত্যাহার করবে।’

ভারতীয় অর্থনীতিবিদরা যেখানে রপ্তানিখাত নিয়ে শঙ্কিত সেখানে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে অভ্যন্তরীণ বাজার সম্প্রসারণের প্রস্তাব দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তৈরি পোশাক ও উৎপাদন খাত সচল রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প খোঁজার পরামর্শ তাদের।

বিশ্লেষকদের অনেকেই আশাবাদী, আলোচনার মাধ্যমে ওয়াশিংটনের সঙ্গে এ বৈরিতা মিটিয়ে ফেলতে পারে নয়াদিল্লি। যদিও ভারতের কূটনৈতিক পদক্ষেপ বলছে ভিন্ন কথা। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টেক্কা দিতে চায় ক্ষমতাসীন বিজেপি প্রশাসন- এমন গুঞ্জন আছে ভারতীয় গণমাধ্যমে।

সেজু