ভারতের ওয়াকফ বোর্ড নিয়ন্ত্রণ আপাতত মুসলিমদের হাতেই!

এশিয়া
বিদেশে এখন
0

ভারতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আপাতত তিন সপ্তাহের জন্য ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম নিয়োগ দিতে পারছে না বিজেপি সরকার। ওয়াকফের অধীনে থাকা সম্পত্তি ও উপকারভোগীদের সুরক্ষা নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। এতে সাময়িক স্বস্তি মিললেও দীর্ঘমেয়াদে কী ঘটবে, তা নিয়ে শঙ্কিত মুসলিম নেতারা। ওয়াকফ ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গে প্রাণঘাতী সহিংসতার ঘটনায় পাল্টাপাল্টি দোষারোপে ব্যস্ত ক্ষমতাসীন ও বিরোধীরা।

সংখ্যালঘু মুসলিমদের দানের জমি নিয়ে আইনি লড়াই ভারতে চলছে বহুদিন ধরে।

শুধু দিল্লিতে মসজিদ, কবরস্থান আর মাজার রয়েছে এক হাজারের বেশি। নগরীর কয়েকশ' বছরের পুরোনো ইসলামিক ঐতিহ্যের প্রতীক এসব স্থাপনা ধর্মীয়, শিক্ষাগত আর সম্প্রদায়ের কল্যাণে দাতব্য কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে; যেগুলোর মধ্যে অন্তত ১২৩টির মালিকানা নিয়ে কয়েক দশক ধরে লড়াই চলছে কেন্দ্রীয় সরকার আর ওয়াকফ বোর্ডের মধ্যে।

মুসলিম জনগোষ্ঠী আছে, এমন বহু দেশে ওয়াকফ একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান, যার মাধ্যমে মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান, এতিমখানা, হাসপাতাল ইত্যাদি পরিচালিত হয়। দেড়শ' কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতে সংখ্যালঘু ২০ কোটি মুসলিমের জন্যও মাথার ওপর ছায়া ওয়াকফ।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার সেই ওয়াকফ বোর্ড নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিতর্কিত সংশোধনী আইন এনে তোলপাড় করেছে সারা দেশে। মুসলিমদের তীব্র রোষের মুখে বিষয়টি গড়ায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত। ওয়াকফ সম্পত্তির সুরক্ষা এবং পরিষদে অমুসলিম নিয়োগে বৃহস্পতিবার স্থগিতাদেশ দেন সুপ্রিম কোর্ট। পরবর্তী শুনানি ৫ মে।

ভারতের লোকসভা সদস্য আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেন, 'সুপ্রিম কোর্ট সাময়িক স্বস্তি দিয়েছে। আমাদের দল ও সর্বভারতীয় মুসলিম সংগঠনের এটাই অবস্থান যে এ আইন একটি কালো আইন, একইসাথে অসাংবিধানিক। মৌলিক অধিকারের সাথে সাংঘর্ষিক এটি।'

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তেলেঙ্গানায় ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে ৭৭ হাজার একর জমি আর ৩৫ হাজার অন্যান্য সম্পত্তি আছে। দেশজুড়ে ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে থাকা জমির পরিমাণ প্রায় পাঁচ লাখ একর।

২০১৩ সালে ভারতে ওয়াকফের আয় ছিল ১৬৬ কোটি রুপি। বিজেপি সরকারের দাবি, ডিজিটাল তথ্য রেকর্ড, যথাযথ নিরীক্ষা আর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জিও-ট্যাগ প্রয়োগের মাধ্যমে ওয়াকফ থেকে বছরে ১২ হাজার কোটি রুপি রাজস্ব বের করে আনা সম্ভব।

ক্ষমতাসীন বিজেপির দাবি, দুর্নীতি দমনের লক্ষ্যে সংশোধনী আনা হয়েছে ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনে। সংশোধিত আইনের মাধ্যমে গরিবের জমি লুট বন্ধ হবে এবং মুসলিমরা লাভবান হবেন বলে দাবি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। কিন্তু ভারতের মুসলিম সম্প্রদায় ও বিরোধী দলীয় নেতাদের শঙ্কা, দুর্নীতি দমনের নামে এ আইনের মাধ্যমে মুসলিমদের স্থাবর সম্পত্তি দখলে নিতে চাইছে মোদি সরকার।

ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি বলেন, ‘ক্ষমতার জন্য এরা যতোটা নিচে নামা সম্ভব, নামতে পারে। ১৯৪৭ সাল থেকেই এসব হয়ে আসছে। এই সংশোধনীর সাথে সাথে কত জায়গায় যে মুসলিমদের বলা হচ্ছে যে এই কবরস্থানে দাফন করা যাবে না, কত মাদ্রাসা ভেঙে দেয়া হয়েছে, কত মসজিদ ভাঙা হচ্ছে, কত মানুষের ওপর হামলা হয়েছে এসবের কোনো হিসাব নেই।’

এদিকে ওয়াকফ ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলায় রক্তক্ষয়ী সহিংসতার ঘটনায় কলকাতা উচ্চ আদালতের নির্দেশে জেলায় মোতায়েন রয়েছে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী। সহিংসতার জন্য কংগ্রেসকে দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে কংগ্রেস।

এসএস