মিয়ানমারে জান্তা সরকারের দেয়া নির্বাচনের ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন আন্তর্জাতিক মহলে

মিয়ানমারে ২০২০ সালের নির্বাচন
এশিয়া
বিদেশে এখন
0

মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য জান্তা সরকার সাড়ে চার বছরের জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করলেও এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দেশটির বিরোধী দলগুলোর অধিকাংশ নেতাই যখন কারাবন্দি তখন এই নির্বাচন কীভাবে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে তা পরিষ্কার নয়। এছাড়া জান্তা সরকারের সঙ্গে চীনের সখ্যতা ও স্বার্থরক্ষা নিয়েও বিভাজন আছে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে।

সাড়ে চার বছর পর জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার, ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি- সব মিলিয়ে মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে বার্তা দিচ্ছে জান্তা সরকার তাতে কতটা আশ্বস্ত হতে পারছে দেশটির সাধারণ মানুষ? এমন প্রশ্ন তুলছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে জোর দিলেও এরইমধ্যে নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছে দেশটির বিরোধীদলগুলো। বিপরীতে নির্বাচন ফলপ্রসূ করতে আগেভাগেই আইনকানুন নিয়ে প্রস্তুত জান্তা সরকার। নতুন নিয়মে আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচন বর্জনে আন্দোলন করলে ভোগ করতে হবে তিন থেকে সাত বছরের কারাদণ্ড। আর সহিংসতার আশ্রয় নিলে সাজার মেয়াদ হবে পাঁচ থেকে দশ বছর।

অধিকাংশ নেতা কারাবন্দি থাকায় এ নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলো। পাশাপাশি নির্বাচন পরিচালনার জন্য জান্তা সরকার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও শান্তি কমিশন গঠনের যে ঘোষণা দিয়েছেন সেখানেও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলছে বিরোধীরা।

এর সঙ্গে যোগ হয়েছে চীন-মিয়ানমার সম্পর্কের দৃষ্টিকোণও। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত কারণে দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্ককে বরাবরই পাউক ফাউ বা ভ্রাতৃপ্রতিম হিসেবে বর্ণনা করে আসছে জান্তা সরকার। মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে সর্বোচ্চ সমর্থন দেয়া চীনও চায় দেশটিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরুক।

চীনের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, ‘মিয়ানমারে পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা অবগত। জাতীয় নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমরা তাদের পাশে আছি। জাতীয় পর্যায়ে কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে চীন মিয়ানমারের পাশে থাকবে।’

চীনের এই উদারপন্থী অবস্থানকে ভালো চোখে দেখছেন না আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, উদ্দেশ্য ছাড়া বেইজিং কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলায় না। এছাড়া বিরোধী দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ছাড়া একটি জাতীয় নির্বাচন কীভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে? এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা।

এপিসিএসএসের আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মিমি বার্ড বলেন, ‘চীন সুযোগের অপেক্ষায় আছে। স্বার্থ উদ্ধার হলে তাদের আর পাওয়া যাবে না। আপনি কীভাবে একটু অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করবেন, যেখানে বিরোধী দলের অধিকাংশ নেতারা কারাবন্দি।’

জান্তা সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও। পাশাপাশি, সামরিক শাসনের আওতায় অনুষ্ঠিতব্য একটি নির্বাচন আদৌ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে- এমন ন্যারেটিভ নিয়েও আছে বিভক্তি। ফলে ২০২১ সাল থেকে যে অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে পূর্ব এশিয়ার দেশটি, ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর সেখানে স্থিতিশীলতা ফিরবে কী না- এ প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

এসএস