ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজা-ইয়েমেন-লেবাননে রক্তপাত

মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

উপত্যকায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিলেও গাজায় বিরামহীন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। গতকালও (বৃহস্পতিবার, ২২ মে) রাতভর হামলায় ৮৫ প্রাণ গেছে ৮৫ ফিলিস্তিনির। অন্যদিকে তীব্র খাদ্য সংকটে মারা গেছে শিশুসহ আরও অন্তত ২৯ জন। এমন অবস্থায় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স আর কানাডার নেতারা চান, হামাসই গাজার শাসন ব্যবস্থায় থাকুক। গাজার পাশাপাশি ইয়েমেন আর লেবাননেও অব্যাহত রয়েছে ইসরাইলি হামলা।

৮০ দিনের ব্লকেডের পর উপত্যকায় ত্রাণ প্রবেশ শুরু হলেও গৃহহীন অনেক ফিলিস্তিনির কাছে এখনও পৌঁছায়নি ত্রাণ। সহায়তা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও উপত্যকায় তা সরবরাহে বেগ পেতে হচ্ছে জাতিসংঘকে। কারণ পুরো উপত্যকাই দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। ক্ষুধার্ত অবস্থায় সেই খাবার খাওয়ার আগেই প্রাণ হারাতে হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের। তীব খাদ্য সংকটে যে সংখ্যা পৌঁছাতে পারে কয়েক হাজারে। অপারেশন গিডিয়নস চ্যারিয়ট শুরুর পর থেকেই প্রতিদিন প্রাণ যাচ্ছে গড়ে শতাধিক ফিলিস্তিনি।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘যদি স্বেচ্ছাসেবীরা না থাকতো, আমাদের খাওয়ার কিছুই থাকতো না। আগে তো বাজারে গিয়ে সবজি, রুটি কিনতে পারতাম। কিন্তু এখন বাজারেও কিছু নেই। যা আছে তার দাম অস্বাভাবিক।’

অন্য একজন বলেন, ‘আমরা বেঁচেই আছি খাবারের ওপর। আগে আমাদের পর্যাপ্ত খাবার ছিল। কিন্তু এখন খাবার নেই। বাচ্চাদের, পরিবারের মুখে তুলে দেয়ার মতো কিছু নেই। যুদ্ধে মারা না গেলেও ক্ষুধায় মারা যাবো।’

জাতিসংঘ মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেন, ‘অবরুদ্ধ ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের কেরেম শ্যালম ক্রসিং দিয়ে গাজার বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে ৯০ টি ত্রাণবাহী ট্রাক। এরমধ্যে গম, ওষুধসহ আরও প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেয়া হচ্ছে। অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের কাজ এটা। কারণ পুরো উপত্যকায় ত্রাণের প্রয়োজন। এই ত্রাণ পর্যাপ্ত না। হাসপাতালগুলোর জন্যও প্রয়োজনীয় সামগ্রী দরকার। জাতিসংঘ আপাতত খাবার, জরুরি পুষ্টি আর ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করছে। কিন্তু ৮০ দিনের ব্লকেডের পর ত্রাণ সরবরাহ করা এতো সহজ নয়।’

এদিকে শুক্রবার সকালেও গাজায় যুদ্ধবিমান দিয়ে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। দেইর আল বালাহ’তে বোমা হামলা চালিয়েছে আইডিএফ। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, উপত্যকার ৮১ শতাংশই সামরিক এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে ইসরাইল। ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে অসহায় ফিলিস্তিনিদের। অবরুদ্ধ পশ্চিমতীরেও বাড়িঘর গুড়িয়ে এলাকা দখলের পাঁয়তারা করছে নেতানিয়াহু বাহিনী।

এমন অবস্থায় হামাস নির্মূলের নামে গাজায় নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়ে এবার খোদ নেতানিয়াহুই অভিযোগ করেছেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারসহ অন্যান্য বিশ্বনেতারা হামাসকেই গাজার শাসনব্যবস্থায় দেখতে চায়। ব্রিটিশ, ফ্রেঞ্চ আর কানাডীয় নেতারা গণহত্যাকারীদের পক্ষ নিচ্ছে। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে ইসরাইলি দূতাবাস কর্মকর্তাদের হত্যার ঘটনায় নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, কিয়ার স্টারমার, ইমানুয়েল ম্যাক্রো আর মার্ক কার্নি চাইছেন, ইসরাইল সরে যাক, গাজার নেতৃত্বে আসুক হামাস।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘তারা এখন প্রস্তাব দিচ্ছে ফিলিস্তিন আলাদা রাষ্ট্রের। হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করতে চাইছে। ১৮ বছর ধরে ডি ফ্যাক্টো রাষ্ট্র আছে, যেটার নাম গাজা। শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে? প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো, প্রধানমন্ত্রী স্টারমার আর মার্ক কার্নি হামাসকে ধন্যবাদ জানিয়েছে, ইসরাইলকে যুদ্ধ শেষ করতে বলায়। তারা আমাদের নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে, হামাসকে না। তারা চায় ইসরাইল সরে যাক, হামাস ক্ষমতায় থাকুক। ৭ অক্টোবর বারবার আসুক। যখন হত্যাকারীরা আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছে, তখন আপনার ভুল দিক বেছে নিয়েছেন।’

বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন ডিসির একটি জাদুঘরের বাইরে হত্যা করা হয় দুই ইসরাইলি দূতাবাস কর্মীকে। ৩১ বছর বয়সী ইলিয়স রদ্রিগেজ নামের সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও হয়েছে। যদিও তার স্বীকারোক্তি, তিনি গাজার জন্য এই কাজ করেছেন, ফিলিস্তিনের জন্য এই কাজ করেছেন।

নানা আতঙ্কে দেশের নিরাপত্তা বাড়াতেও বেশ তৎপর নেতানিয়াহু। এতো সমালোচনার মধ্যেও অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের প্রধান হিসেবে মেজর জেনারেল ডেভিড জিনিকে নিয়োগ দিয়েছেন নেতানিয়াহু। ৫১ বছর বয়সী জিনি হলোকাস্ট থেকে বেঁচে ফেরা একজন। গেলো এপ্রিলে দায়িত্বে অব্যাহতি দেন শিন বেতের প্রধান রনেন বার। ১৫ জুন দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেবেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে শিন বেতের নতুন প্রধান নিয়োগের পাশাপাশি কাতারে যুদ্ধবিরতি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ায় তেল আবিবেও ফুঁসে উঠেছেন সাধারণ ইসরাইলিরা।

এদিকে কেবল গাজায় সীমাবদ্ধ নেই ইসরাইল। থেমে থেমে হামলা চালাচ্ছে ইয়েমেন আর লেবাননেও। পাল্টা হামলা হচ্ছে ইয়েমেন থেকেও। চলতি সপ্তাহেই ইয়েমেনের দুটি বন্দরে হামলা করেছে আইডিএফ। জবাবে তেল আবিবে মিসাইল ছোড়া হয়েছে ইয়েমেন থেকে। মিসাইলটি ভূপাতিত করতে সক্ষম হলেও ইসরাইলের বিভিন্ন অঞ্চলে বেজে ওঠে সাইরেন। দায় স্বীকার না করলেও ইসরাইলে অনবরত মিসাইল ছুড়ছে হুথিরা।

অন্যদিকে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। দক্ষিণের নাবাতিয়ে জেলার একটি শহরে হামলা চালিয়ে ভবন গুড়িয়ে দেয়া হয়। চলতি মাসের শুরুতে এই জেলায় ১৪ বার হামলা চালিয়েছে আইডিএফ। অথচ গেলো বছরের নভেম্বর থেকে লেবাননের সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি চলছে। ইসরাইলের বেপরোয়া আচরণের কারণে চতুর্মুখী এই সংঘাত থামাতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন ট্রাম্প।

এসএস