‘ইরান কখনোই পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা করেনি’

পারমাণবিক অস্ত্র
মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

ইরানের কাছে পরমাণু অস্ত্র রয়েছে এবং যেকোনো সময় ইসরাইলের বিরুদ্ধে তেহরান এগুলো ব্যবহার করতে পারে। গেল কিছুদিন ধরে পশ্চিমা গণমাধ্যম ও বিভিন্ন মহলে এমন গুঞ্জনের মধ্যেই দেশটির বিপ্লবী গার্ডের সাবেক প্রধান বলেছেন, ইরান কখনোই পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরোপীয় নেতারাও একই সুরে বলছেন ইরানের কাছে কোনো পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারবে না। এদিকে ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। দাবি করেন, পারমাণবিক ইস্যুতে নিজেদের সবচেয়ে বড় শত্রু ট্রাম্পকে হত্যার পরিকল্পনা করছে ইরান।

গেল শুক্রবার (১৩ জুন) থেকে লাগাতার হামলা, পাল্টা হামলা চলছে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে। ইসরাইলি হামলার অন্যতম লক্ষ্যবস্তু ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা। রাজধানী তেহরানসহ বেশ কয়েকটি পরমাণু স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরাইল। ইরানের সবচেয়ে বড় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নাতাঞ্জ প্ল্যান্ট। ২০০৭ সালে চালু হওয়া এই প্ল্যান্টটি ১৩ জুনের হামলায় বেশ ক্ষতির মুখে পড়ে। ইসরাইলের দাবি, তাদের হামলায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কয়েক বছর পিছিয়ে গেছে।

ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা

১. নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র

২. ফোর্ডো সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র

৩. ইসফাহান পারমাণবিক প্রযুক্তি কেন্দ্র

৪. খানেদাব হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টর

৫. বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র

৬. তেহরান রিসার্চ রিঅ্যাক্টর

৭. পারচিন সামরিক কমপ্লেক্স

ইসরাইল বলছে, ইরানের পারমাণবিক বোমা তৈরির গোপন কর্মসূচি বন্ধে আগাম ব্যবস্থা হিসেবে এ হামলা চালানো হয়েছে। তাদের দাবি, এরইমধ্যে নয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেছে তেহরান। মূলত গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের তথ্যের ভিত্তিতে এমন দাবি প্রতিষ্ঠা করছে ইসরাইল।

এদিকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দাবি, ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত বর্তমানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। যা প্রমাণ করে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে দেশটি। এখন ইসরাইলি হামলার পর মূল ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ইরান যেকোনো সময় সামনে আনতে পারে তাদের পারমাণবিক অস্ত্র।

তবে ইরান শুরু থেকেই জোর দিয়ে বলে আসছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি কেবল বেসামরিক ও শান্তিপূর্ণ উদ্দেশে পরিচালিত হচ্ছে। পারমাণবিক বোমা তৈরির কোনো পরিকল্পনা ইরানের নেই। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের এক সাক্ষাৎকারে এ দাবি করেছেন বিপ্লবী গার্ডে সাবেক প্রধান মোহসেন রেজাই।

তিনি বলেন, ‘ইসরাইলি মিত্রদের প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে ইরান। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ ইসরাইলের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখলে তাদেরও মাশুল গুণতে হবে। তাদের সামরিক স্থাপনাও ইরানের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। এতে যুদ্ধের মাত্রা আরও গুরুতর হয়ে উঠবে। ইরান নিজেদের প্রস্তুত করছে। তবে সংঘাত শুরু নয় শেষ করবে ইরান।’

এরমধ্যেই এবার ইরানের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ তুলেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। সংঘাত শুরুর পর প্রথমবারের মতো ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি দবি করেন, পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য ট্রাম্পকে হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইরান, আর এ কারণেই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করছে তারা।

বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘ইরান ট্রাম্পকে হত্যা করতে চায়। পারমাণবিক ইস্যুতে ইরানের এক নম্বর শত্রু মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কারণ ট্রাম্প কখনও অন্যদের মতো দুর্বলভাবে ইরানের সঙ্গে দর কষাকষিতে যাবে না। তাদের পারমাণবিক বোমা তৈরির পথ বন্ধ করতে সব পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো একই সুরে কথা বলছেন ইউরোপীয় নেতারা। ইরানের কাছে কোনোভাবেই পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারবে না। এ বিষয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরজুলা ফন ডার লাইয়েন। কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত সমাধানেও জোর দেন তিনি।

এদিকে, কানাডায় অনুষ্ঠেয় সোমবারের জি-সেভেন সম্মেলনেও এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকছে চলমান ইরান-ইসরাইল সংঘাত। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরাইলের হামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশ্বের শক্তিশালী সাত অর্থনৈতিক দেশের নেতারা। তাদের মতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ইউরোপের জন্য বড় হুমকি।

পারমাণবিক কার্যক্রম সীমিত রাখার শর্তে ২০১৫ সালে একটি চুক্তিতে আসে ইরান। বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। তবে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার সবশেষ প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ইরানের মোট সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত প্রায় নয় হাজার কেজি। সংস্থাটির দাবি, পারমাণবিক বোমা তৈরিতে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে খুব একটা দূরে নেই ইরান। বর্তমানে যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম আছে, তা দিয়ে ১০টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারবে দেশটি।

এসএস