ঈদের ক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে, মধ্যপ্রাচ্য-উত্তর আফ্রিকা থেকে শুরু করে এশিয়া পর্যন্ত অর্থনৈতিক সংকট আর উচ্চ মূল্যস্ফীতির কালো ছায়া প্রভাব ফেলেছে উৎসবের প্রস্তুতিতে।
ইসলাম ধর্মে প্রধান দুটি উৎসবের একটি পবিত্র ঈদুল আজহা। পশু কোরবানি এ উৎসবের অন্যতম প্রধান ও হাজার বছরের রীতি। দুর্বল অর্থনীতির কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়াতেই ম্লান ঈদের আনন্দ।
ইন্দোনেশিয়ার স্থানীয় একজন বলেন, ‘যেদিন বাজার চালু হলো, সাড়ে ৩ শ’ বাছুর বসেছিল হাটে। ২০০ এর মতো বিক্রি হয়েছে। অন্যান্য বছর একই সময়ে ৫০০ পর্যন্ত বিক্রি হয়ে যেতো।’
গোখাদ্য, পরিবহন আর করবাবদ বাড়তি খরচ গুণতে হচ্ছে বলে পশুর দাম বেশি, দাবি পাকিস্তানের বিক্রেতাদের। কিন্তু এসব কারণে চার-পাঁচ গুণ বেশি দাম ন্যায্য নয়, বলছেন ক্রেতারা।
পাকিস্তানের স্থানীয় একজন বলেন, ‘গমের দাম বেশি। পরিবহন খরচ বেশি। করসহ নানা খরচ আছে। দাম তো বেশি হবেই। ক্ষতিতে তো বিক্রি করবো না।’
অন্য একজন বলেন, ‘আকাশছোঁয়া দাম। তিন লাখ রুপির পশুর দাম চাইছে সাত লাখ রুপি , আট লাখ রুপি , ১০ লাখ রুপি।’
আল্লাহ'র সন্তুষ্টি কামনায় সামর্থ্যবান মুসলিমরা পশু কিনে পরিবার, প্রতিবেশি, আত্মীয়স্বজন আর গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বিলি করে ভাগ করে নেবেন আনন্দ, এমনটাই রীতি ঈদুল আজহার। কিন্তু আত্মত্যাগের মহিমায় ঈদ উদযাপনে দেশে দেশে কোরবানির পশু কেনাই কঠিন হয়ে পড়েছে অনেকের জন্য।
মিশরের স্থানীয় একজন বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো ভুট্টা আর ফাভা বিন। এগুলোই খাবার। অনেক খরচ করি আমরা। শেষ পর্যন্ত ক্রেতা মাংস ভালো পেলে এবং সব ঠিকঠাক হলেই খুশি, আল্লাহ'র সন্তুষ্টি আদায়ের এটাই পথ।’
আলজেরিয়ার একজন মুসলিম বলেন, ‘অনেকে বলছে যে দাম বেশি। ভেড়া, গোখাদ্যের খাবারেরই যে দাম, তার ওপর এগুলোর যত্ন আর পশুচিকিৎসকদের খরচ, সবই তো বেশি। তাই পশুর দামও বেশি।’
ইরাকে ঈদ পালনকারীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘প্রতি বছর কোরবানির ঈদ এলেই ভেড়া, গরু আর বাছুরের চাহিদা অনেক বেশি বেড়ে যায়। আমাদের বাড়-দাদাদের সময় থেকেই এমনটা দেখে আসছি। কিন্তু এ বছর তেমনটা ঘটছে না। আমদানিকৃত ভেড়ার দাম বেশি বলে প্রভাব পড়ছে বাজারে।’
জর্ডানের একজন বলেন, ‘গত বছর আর তার আগের বছরের তুলনায় এ বছর পশুর দাম অনেক চড়া। জর্ডানে ভেড়া কম বলে দাম বেশি।’
ইয়েমেনের মুসলিমদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আজকাল দাম অনেক, অনেক বেশি। মানুষের আয় বলতে কিছু নেই। পরিস্থিতি অনেক কঠিন।’
সিরিয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর কোরবানির পশুর দাম ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ নেমে গেলেও গত বছরের মতো নেই উৎসবের আনন্দঘন পরিবেশ। দাম বেশি বলে অনেকে মিলে একটি পশু বা ভাগে কোরবানি দেয়া, কিস্তিতে পশু বিক্রি- এমন নানা উপায় অবলম্বন করছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা।
সিরিয়ার স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে। একেকটা ভেড়ার দাম ২৫ লাখ লিরা । মানুষের কাছে এতো পয়সা নেই।’
লিবিয়ায় অবস্থানকারীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘ধর্মীয় রীতি পালনে মানুষকে সহযোগিতার একটি সম্ভাব্য সেরা উপায় বের করেছি আমরা। ১৫ মাসের কিস্তির সুবিধা চালু করেছি। এতে পশু কিনলেও একবারে মোটা অঙ্কের অর্থের বোঝা চাপবে না গ্রাহকের ওপর। পকেটে বেতনের টাকা পর্যাপ্ত থেকে যাবে।’
আল্লাহর নির্দেশে হজরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ পুত্রকে উৎসর্গে প্রস্তুতির দিনটি ঈদুল আজহা হিসেবে উদযাপন করেন বিশ্বের ২০০ কোটি মুসলিম।