আজ (বুধবার, ২৫ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা জানান।
নির্বাচন কমিশনসহ, কর্ম কমিশন কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ দলনিরপেক্ষ করতে আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের যে ধারণা তুলে ধরেছে ঐকমত্য কমিশন; তাতে অধিকাংশ একমত হলেও পৌঁছানো যায়নি ঐকমত্যে।
আলী রিয়াজ বলেন, ‘আজকের বৈঠকে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটি গঠনের বিষয়ে বেশিরভাগ দল স্বাগত জানালেও কিছু রাজনৈতিক দল আপত্তি জানিয়েছে। ফলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়নি।’
যদিও ধারাবাহিক আলোচনার প্রেক্ষিতে সাংবিধানিক কাউন্সিল থেকে সরে গিয়ে, নতুনভাবে নতুন নামে সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটি হিসেবে প্রস্তাব করে ঐকমত্য কমিশন।
আলী রিয়াজ বলেন, ‘যতক্ষণ না সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান গঠিত হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না।’
নতুন প্রস্তাবে বলা হয়, সরকারি দল থেকে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার এবং রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি, বিরোধী দল থেকে থাকবে বিরোধী দলীয় নেতা, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দল বাদে সংসদের অন্যান্য দল থেকে থাকবে একজন এবং প্রধান বিচারপতির প্রতিনিধি হিসেবে থাকবে আপিল বিভাগ থেকে একজন।
মোট ৭ জনের এই নিয়োগ কমিটিকে স্বাগত জানায় বেশিরভাগ দল; যেখানে আগে বিরোধিতা করা সিপিবি বা বাসদও আছে।
কিন্তু সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে দলনিরপেক্ষ নিয়োগের আশায় সব মত পক্ষের লোকদের নিয়ে প্রস্তাবিত এমন কোনো কমিটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার বিপক্ষে বিএনপি।
তারা বিদ্যমান আইন পরিবর্তন এবং নতুন আইন করারই পক্ষে। এতে নির্বাহী ক্ষমতাকে সংকুচিত করা হয় বলে তারা আরেকটি যুক্তি তুলে ধরেছে।
দিনভর আলোচনা শেষে এ নিয়ে আপত্তি-ই জানাচ্ছিল বিএনপি। তখন এর পক্ষে যুক্তি কী, এ নিয়েই ড. আলী রীয়াজ এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের মধ্যে একধরনের বিতর্ক তৈরি হয়।
এরপর ব্রিফিংয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, তারা দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, এটাতে একমত হবেন যদি না এনসিসির মত কোনো প্রতিষ্ঠান সংবিধানে অন্তর্ভুক্তের সিদ্ধান্ত হয়।
বিএনপির সুরে তাল মেলাতে দেখা যায়, এনপিপি, এলডিপি, লেবার পার্টি নামের ৩টি দলকে।
ড. রিয়াজের ভাষ্য অনুযায়ী, আজকের বৈঠকে কার্যত কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও আলোচনার অগ্রগতি ও দলগুলোর অবস্থানকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে ঐকমত্য কমিশন।
এর আগে, রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার ষষ্ঠ দিনের সভা শুরু হয়; সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন হবে কি না, কী কী যুক্ত হতে পারে সেসব প্রস্তাব নিয়ে। এখানে ব্যাপক মতপার্থক্য দেখা দেয় ডান ও বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে।
মূলত আগের ৪টি মূলনীতি (জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা) বাদ দিয়ে নতুন করে গণতন্ত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচারও ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতির প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় এ সভায়। কিন্তু ঐকমত্যে অবশেষে এ বিষয়টি মুলতবি রেখেই সভা আগায় দ্বিতীয় এজেন্ডা নিয়ে।