জুলাই সনদ ঘিরে রাজনীতির নতুন মেরুকরণ; রাজনৈতিক জোট নাকি একক নির্বাচন!

ঐক্যমত্য কমিশনের বৈঠক
দেশে এখন
রাজনীতি
0

সংস্কার কিংবা জুলাই সনদ ঘিরে রাজনীতির নতুন মেরুকরণ শেষ পর্যন্ত কি জোটে রূপ নেবে? নাকি বিএনপির বিপরীতে শুধু ইসলামপন্থীরাই জোটবদ্ধ হবে? এমন সব সমীকরণে- জোটের রাজনীতিতে আগের মতো ব্যর্থ হতে চায় না ইসলামী আন্দোলন। জামায়াত বলছে, রাজনৈতিক জোট কিংবা জোটবদ্ধ নির্বাচন দু’টি প্রক্রিয়াই খোলা রাখছে তারা। এদিকে, ইসলামপন্থী দলের নেতৃত্বে জোটে যেতে আগ্রহী নয় এবি পার্টি। আর এনসিপি বলছে, এ মুহূর্তে নতুন সংবিধান নিয়ে কাছাকাছি মতের দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে দলটি।

আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে আলোচনায় ইসলামপন্থীদের রাজনৈতিক জোট। এ নিয়ে নানা বক্তব্য-মতামত ওঠে আসছে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে। আলোচনায় ইসলামপন্থী দলগুলোর সব ভোট এক ব্যালেটে আনার বিষয়টিও।

ধর্মীয় মতভেদ ভুলে ভোটের মঞ্চে এক হতে চায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন। এছাড়াও জোটের আলোচনায় আছে বেশ কয়েকটি ইসলামিক দল। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবায়তায় জনমনে নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাই আগের মতো জোটের রাজনীতিতে এবার ব্যর্থ হতে চান না তারা।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘বিএনপির পরে ধারাবাহিকভাবে ২,৩,৪ সিরিয়ালে আছে ইসলামী সংগঠনগুলো। ইসলামী সংগঠনগুলোর দিকে মানুষের প্রত্যাশা বেশি। এককভাবে কোনো ইসলামী সংগঠন ক্ষমতায় যাওয়ার মতো অবস্থানে নেই। এজন্য আমরা মানুষের প্রত্যাশা অনুধাবন করেই আমরা সকল ইসলামী সংগঠন ঠিক করেছি আগামী নির্বাচনে যাতে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনটা করা যায়।’

তবে, এ মুহূর্তে রাজনৈতিক জোটের বিষয়ে না ভাবলেও গণপরিষদ নির্বাচন ও নতুন সংবিধানের বিষয়ে কাছাকাছি মতের দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে তাদের। পরে এটি রাজনৈতিক জোটে রূপান্তর হতে পারে বলে মনে করছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আরিফুর রহমান আদীব।

জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আরিফুর রহমান আদিব বলেন, ‘বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক সংকট সে সংকট নিরসনে গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের দিকে যেতে হবে। আমরা আমাদের দাবিগুলো নিয়ে অনেকগুলো দলের সাথে আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করেছি। সেই গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিতে যদি অন্যান্য দলগুলো আমাদের সঙ্গে একমত হয় তাহলে আমরা একসাথে আন্দোলন এবং আন্দোলন পরবর্তীতে জোটে রূপান্তর হতে পারে।’

আরও পড়ুন:

এদিকে, ঐক্যমত্য কমিশনে প্রধান প্রধান সংস্কার নিয়ে ঘোষিত জোট না হলেও অনেকটা মেরুকরণ হয়েছে বলে দাবি করেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ। বলেন, রাজনৈতিক জোট কিংবা জোটবদ্ধ নির্বাচন যে প্রক্রিয়ায়ই হোক সে ব্যাপারে বিভিন্ন দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে জামায়াত।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘সংস্কার কমিশনে যে আলোচনা হয়েছে সেখানেও ঘোষিত জোট না হলে অনেকটা ম্যানুকরণ হয়েছে। সম্ভাবনায় যারা আছি তারা সবাই মিলে আমরা একটা নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য আগে ঐক্যবদ্ধ হবো। তারপরে নির্বাচনী বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করবো।’

তবে ইসলামপন্থী দলের নেতৃত্বে জোটে যেতে অনাগ্রহী এবি পার্টি। দলটির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু জানান, এককভাবেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। তবে মধ্যপন্থী ও জুলাই আকাঙ্ক্ষা পোষণ করা দলের মধ্যে জোট হলে আগ্রহী তার দল।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘আমরা এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারণ আমরা দেখেছি অতীতে কোনো নির্বাচনে ধর্মীয় দলের জোটে যদি নির্বাচন হয় তাহলে তাদের রেজাল্ট ভালো হয় না। বরং ধর্মীয় দল যদি অন্য মধ্যপন্থী দলের অধীনে জোটে যায় তাহলে তাদের রেজাল্ট ভালো হয়। ওইরকম কোনো জোট যদি হয় কোনো মধ্যপন্থী দলের নেতৃত্বে ধর্মীয় দল থাকলো অন্যান্য দলও থাকলো সেটাও একটা বিবেচনায় রাখা যেতে পারে।’

রাজনৈতিক জোটের বিষয়টি অস্পষ্ট থাকলেও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি বাস্তবায়ন ও গণপরিষদ কিংবা পি আর পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিষয়ে সহবস্থানে রয়েছে জামায়াত, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন। সেটা জোটে রূপান্তর হবে কিনা, তা হয়তো নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরই বোঝা যাবে।

ইএ