অনিশ্চয়তায় পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ কার্যক্রম; খুলনায় স্থবির হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

অনিশ্চয়তায় খুলনায় গ্যাসের পাইপ লাইনের কাজ
এখন জনপদে
বিশেষ প্রতিবেদন
0

অনিশ্চয়তায় খুলনায় পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের কার্যক্রম। এতে থমকে আছে এ অঞ্চলের শিল্পায়ন, বন্ধ হয়ে পড়ে আছে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। ভোলা থেকে উত্তোলিত গ্যাস অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে খুলনায় সরবরাহের খবর আশার আলো জ্বালিয়েছিল, তবে পেট্রোবাংলার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভোলার গ্যাস আগে ঢাকায় নেয়ার সিদ্ধান্তে খুলনায় গ্যাস আসার সম্ভাবনা ফিকে হওয়ার শঙ্কায় স্থানীয়রা।

এক সময়ের শিল্পনগরী খুলনা হারিয়েছে জৌলুস। পাট ও পেপার মিল বন্ধ হওয়ার পর নতুন করে গড়ে ওঠেনি তেমন বড় কোনো ভারী শিল্প কারখানা। বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা, উন্নত যোগাযোগ ও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর থাকার পরও আগ্রহ নেই বিনিয়োগকারীদের। গ্যাসের সরবরাহ না থাকাকেই এর কারণ হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা।

খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক পরিচালক মো. ইসলাম খান বলেন, ‘বিনিয়োগ করবো কীসের ওপর ভিত্তি করে? আমাদের এনার্জি সেক্টরেই তো সমস্যা। আমরা তো ডিজেল দিয়ে ইঞ্জিন চালিয়ে তো আমরা বড় বড় ইনভেস্টমেন্ট করে তো বড় প্রোডাকশনে তো আসতে পারবো না। খুলনার শিল্পকে আবারো সমৃদ্ধ করতে হলে, এ অঞ্চলকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হলে এখানে গ্যাস লাইন আনতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’

খুলনায় পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস না আসার কারণে শুধু যে শিল্পখাতের ক্ষতি হচ্ছে তা কিন্তু নয়, এখানে এরই মধ্যে হাজার কোটি টাকা খরচ করে বানানো হয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর কিছু প্রকল্প একেবারেই বন্ধ রয়েছে, আবার কিছু প্রকল্প খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে।

জ্বালানির সরবরাহ নিশ্চিত না করেই খুলনায় একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে বিগত সরকার। খুলনায় ৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে নগরীর খালিশপুর এলাকায় প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র। 

অথচ গ্যাসের অভাবে একদিনও চলেনি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। গ্যাসের অভাবে অলস পড়ে থেকে নষ্ট হওয়ার পথে ৮ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প। 

এ ছাড়া খুলনার ২৩০ ও ৩৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র দু’টি গ্যাসের অভাবে চলছে হাই স্পিড ডিজেলে। এতে প্রাকৃতিক গ্যাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইউনিট প্রতি ৫ টাকা খরচ পড়লেও ডিজেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ পড়ছে প্রায় ২০ টাকা ইউনিট।

দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় গ্যাস সরবরাহের দায়িত্ব রয়েছে পেট্রোবাংলার আওতাধীন সুন্দরবন কোম্পানির ওপর। শিল্প প্রতিষ্ঠানে সরবরাহের লক্ষ্যে ২০১২ সালে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে খুলনার আড়ংঘাটা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপন করে প্রতিষ্ঠানটি। নির্মাণ করা হয় ট্রান্সমিশন ল্যান্ড ফিল্ডও। 

কিন্তু এক যুগ কেটে গেলেও সরবরাহ শুরু হয়নি। সবশেষ ভোলায় উত্তোলিত গ্যাস বরিশাল হয়ে ঢাকা ও খুলনায় সরবরাহের সিদ্ধান্তে অনেকটা আশায় বুক বাঁধেন খুলনাবাসী। তবে খুলনায় প্রয়োজনীতা কম এমন কথার উপর ভিত্তি করে পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহের কার্যক্রম পেছানো হয়েছে।

সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লি.-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক গৌতম চন্দ্র কুন্ডু বলেন, ‘খুলনাতে সংযোগ দেয়ার জন্য ইতোমধ্যেই একটা পাইপলাইন প্রক্রিয়াধীন আছে এবং সেটা প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ হয়ে গেছে। আমাদের একটা রেল ক্রসিংয়ের কাজ আছে, সেটা শেষ হলে আমরা এটা সফলভাবে শেষ করতে পারবো এবং কিছু ইন্ডাস্ট্রিতে সংযোগ দিতে পারবো।’ 

এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকার আগে খুলনায় গ্যাস সরবরাহের দাবি স্থানীয়দের।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, ‘অতি দ্রুত যদি খুলনায় গ্যাস সরবরাহ করা হয়, তাহলে এই অঞ্চলের পদ্মা সেতুর যে অর্থনৈতিক সুফল তা এই এলাকার মানুষ ভোগ করতে পারবে।’

দ্রুত পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাসের সরবরাহ করে সংকট সমাধানের দাবি খুলনাবাসীর।

এসএইচ