একজন নারী বলেন, ‘যখন আমি কথা বলতে গিয়েছি তখন আশপাশের মানুষ আমাকে সাহায্য করেনি। ওইভাবে কথা বলেনি।’
একটি ভয়াল দিনের স্মৃতি। এখনও আঁতকে ওঠেন সেই দিনের কথা মনে করে। কী হয়েছিল?
তিনি বলেন, ‘আমাকে একদিন এক লোক ব্যাডটাচ করেছে। যখন আমি প্রথমবার ভেবে নিয়েছিলাম যে এটা মনে হয় ভুল করে হচ্ছে কিন্তু দ্বিতীয়বার আমি বুঝতে পারি যে এটা ইচ্ছা করে করছে।’
এমন অভিজ্ঞতা স্কুল পড়ুয়া থেকে কর্মজীবী নারী, সবার জীবনেই কম বেশি রয়েছে। দিনের বেলায় কিছুটা স্বস্তি থাকলেও রাতে পাবলিক বাসে সেই অনিশ্চয়তা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। প্রতিনিয়ত নারী নির্যাতন ও হয়রানির নানা ঘটনা সেই ভয় যেন আরো যেন জেঁকে বসেছে মনোজগতে।
এমন হাজারও অনিশ্চিয়তা ও অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা এড়াতে ১৯৯৮ সালে এবং পরে ২০১৫ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ‘মহিলা বাস’ সার্ভিস চালু করে বিআরটিসি। ২০১৮ সালে বেসরকারিভাবে ‘দোলনচাঁপা’ বাস সার্ভিস চালু করা হয় নারীদের জন্য। যা বন্ধ হয়ে যায় ২০২২ সালে। কাগজে-কলমে এখন রাজধানীতে বিআরটিসির মাত্র ৬টি রুটে ৬টি বাস চলে নারীদের জন্য।
বিআরটিসির ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, বায়তুল মোকারম মসজিদের সামনে রোববার থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টা ১৫ মিনিটে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা মহিলা সার্ভিসের একটি বাস।
যদিও ওয়েবসাইটে দেয়া সময় অনুযায়ী প্রায় ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করেও তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। আলাদা বাস চালু থাকলেও, অনেক নারীই তা জানেন না। সময়সূচির অনিশ্চয়তা ও বাসের সংখ্যা কম হওয়ায় এ সার্ভিস কার্যকরভাবে পৌঁছায়নি সবার কাছে, এমন অভিযোগ তাদের।
বাস কাউন্টারের একজন বলেন, ‘আমাদের এই বাস মতিঝিল থেকে শুরু করে পল্টন হয়ে প্রতিদিন ৩টা ১৫ মিনিটে ছাড়ে।’
অন্যদিকে লোকাল বাসে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে প্রায়ই বসে থাকতে দেখা যায় পুরুষদের। যা অস্বস্তির কারণ নারী যাত্রীদের।
বাসচালকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘যারা বসে, আমরা তাদের বলি যে উঠে যান। অনেকে উঠে যায় আবার দুই একজন বসে থাকে।’
বাসে চলাচলকারী একজন নারী বলেন, অনেকসময় টাচের একটা ব্যাপার আছে যেটা নারীদের জন্য অনেক সংবেদনশীল। এখানে অনেক সমস্যা হয়। সেজন্য আমরা চাই যে নারীদের জন্য যদি আলাদা বসার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে ভালো হয়।’
এদিকে বিআরটিএর কর্মকর্তা জানান, আলাদা ‘মহিলা বাস’ সার্ভিসের অনিয়ম নিয়ে কোনো তথ্য নেই তাদের কাছে। এ ছাড়াও আলাদা বাস সার্ভিস থেকে মূলধারার গণপরিবহনকেই নারীবান্ধব করে তুলতেই বেশি আগ্রহী কর্তৃপক্ষ।
বিআরটিএর পরিচালক শেতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, ‘আমার যেটা ধারণা এটা তো শৃঙ্খলার কোনো কারণ নেই। বরং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়া উচিত। কারণ গণপরিবহনের অবস্থা তো খুব একটা ভালো না।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লোকাল বাসে সিসিটিভি ক্যামেরা, পর্যাপ্ত আলো, নারী চালক ও হেলপার এবং কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বাসে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করা যেতে পারে। ডেডিকেটেড স্টপেজ, প্রচারণা বাড়ানো, সময়সূচি মেনে চলার মাধ্যমে চালু রাখা যেতে পারে মহিলা বাস সার্ভিসও।
বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ‘পরিবহনের যে ব্যবস্থাপনা রয়েছে এটাকে নারীবান্ধব করার জন্য প্রথমে হচ্ছে আমাদের বাসগুলোকে নির্দিষ্ট স্টপেজে থামতে হবে। বাসের সময় যেন ঠিক থাকে সেজন্য অ্যাপভিত্তিক করা যেতে পারে যেন একজন বুঝতে পারে যে আমার বাসটা কথন আসবে।’