তিনদিনের বন্দিদশা থেকে মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পাওয়ার বর্ণনা দেন এক বাথান মালিক। গেল ১৭ মার্চ সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার এক নম্বর চায়না বাঁধ এলাকার চর থেকে তাকে অপহরণ করে ডাকাত দল। এই দফায় মুক্তি মেলে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে।
এরপর গেল ৬ এপ্রিল সাতটি গরুসহ আবারও সেই একই বাথান মালিককে অপহরণ করে ডাকাত দল। তবে এই দফায় অসহায়ত্বের কথা জানালে গভীর রাতে দুর্গম চরাঞ্চলে ছেড়ে দেয়া হয় মুক্তিপণ ছাড়াই।
বাথান মালিক বলেন, 'ছোট একটা নৌকায় আমাকে তুলে চারজন ভাটির দিকে গেলো। তখন আমাকে রাখছিল মানিকগঞ্জ। তারপর কর্জ-ধার করে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে তিনদিন পর মানিকগঞ্জ থেকে গাড়ি দিয়ে এনে আমাকে টাঙ্গাইল পৌঁছে দেয়।'
তিনি বলেন, 'আমি বললাম সেদিন আমি পাঁচ লাখ টাকা দিলাম। একজন গৃহস্থের কয়টাকা থাকে। বালুচরে মধ্যে গরু পালি। আর আমাকে নিয়ে এলে এখন ১০ টাকা চাইলেও আমি দিতে পারবো না। পরে বড় নৌকা রেখে ছোট একটা নৌকায় করে যমুনা সেতুর উত্তরপাশে নামিয়ে দিয়ে যায়।'
গভীর রাতে চরাঞ্চলের বিভিন্ন বাথানে দেশি-বিদেশি অস্ত্র নিয়ে হানা দেয় ডাকাত দল। এরপর বাথান মালিক কিংবা রাখালকে বেঁধে চলে মারধর। ছিনিয়ে নেয় দুধ বিক্রির নগদ টাকা, মোবাইল ফোন। আবার কখনও নিয়ে যায় বাথানের গবাদি পশু।
বাথান মালিকদের মধ্যে একজন বলেন, 'আমরা সাধারণ মানুষ, এখানে পড়ে থাকি।তারপরও এসে অত্যাচার করে। তাহলে আমরা কীভাবে বাঁচবো।'
শুধু দুর্গম চরাঞ্চলে নয়, লোকালয় থেকে কাছাকাছি বেশকিছু চরে প্রায়ই ঘটছে এমন ঘটনা। চলতি বছরের শুরুর দিকে ১৪টি গরু খোয়া যায় সিরাজগঞ্জের চরে বাথান করা বগুড়া গাবতলীর সজল ঘোষের। বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে পুলিশে অভিযোগ করেন। প্রায় তিন মাস পেরিয়ে গেলেও মেলেনি হারানো গরু। তবে প্রাণভয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগ করেন না ভুক্তভোগীরা।
পুলিশ জানায়, দুর্গম চরাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় নিয়মিত টহলও হয় না। তবে বাথানকেন্দ্রিক অপরাধের অভিযোগ পেলে সর্বোচ্চ ব্যবস্থার আশ্বাস।
সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জিয়াউর রহমান বলেন, 'পুলিশ ফ্রেন্ডলি যে লোকগুলো আছে তাদের সাথে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকে। আমাদের ইন্টেলিজেন্ট বেজ আমাদের যে কাজকর্মগুলো আছে সেগুলোর মাধ্যমে তাদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করি তারপর প্রো-অ্যাক্টিভ কাজগুলো ওখানে করি। এছাড়া আমাদের রেগুলার টহল যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে এটা সম্ভব হয় না।'