সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, হিজুলী কাচারীবাজার এলাকায় ডায়াবেটিক হাসপাতালের সামনে দুই শতাংশ জমিতে দীর্ঘদিন ধরে ‘মশিউদ্দিন জনকল্যাণ সমিতি’ নামে একটি ক্লাব ছিল, যা পরে নাম পরিবর্তন করে ‘হিজুলী প্রত্যাশা প্রগতি সংঘ’ রাখা হয়। বর্তমানে ক্লাবটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ এবং সাধারণ সম্পাদক পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আরশেদ আলী বিশ্বাস। তবে, পটপরিবর্তনের পর আরশেদ আলী পলাতক থাকায় সুযোগ নেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জমির উদ্দিন বিশ্বাস।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জমির উদ্দিন বিশ্বাস তার চাচাতো ভাই পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি শহিদ বিশ্বাস এবং পৌরসভার লাইসেন্স ইন্সপেক্টর লিটন বিশ্বাসের সহায়তায় ক্লাবের জমিটি দখল করেন। যদিও তার নামে কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জমির উদ্দিন বিশ্বাস জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ডায়াবেটিক হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক সুলতানুল আজম খান আপেলের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি এলাকায় বিচার-শালিশেও সক্রিয় ছিলেন। এমনকি, সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচারণা ও ভোটে প্রভাব খাটানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর প্রেক্ষাপট পাল্টে গেলে জমির উদ্দিন নিজেকে বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচয় দেওয়া শুরু করেন।
স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেন, জমিটি যদি জমির উদ্দিনের পৈত্রিক সম্পত্তি হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ নেতা থাকাকালীন সময়ে কেন দখলে নেননি? এখন বিএনপি পরিচয় দিয়ে ক্লাব ভেঙে জমি দখলের উদ্দেশ্য কী? তাদের দাবি, দখলমুক্ত করে জমিটি ক্লাবের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে আগের কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন করা হোক।
পৌর বিএনপির চার নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘জমির উদ্দিন বিশ্বাস যে আওয়ামী লীগ করতেন, তা সবাই জানেন। পট পরিবর্তনের পর আমরা কয়েকদিন ক্লাবে বসতাম। তবে, আমাদের দলের কিছু নেতার হস্তক্ষেপের কারণে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। জমির উদ্দিন দাবি করেন, পূর্বের ডিসি নাকি তাদের জমির কাগজপত্র দিয়েছেন। তাই ঝামেলা এড়াতে আমরা সরে যাই। পরে তারা ক্লাব ভেঙে দোকান নির্মাণ শুরু করেন।’
অভিযুক্ত জমির উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘প্লটের ১৩ শতাংশ ছাড়া অতিরিক্ত কিছু জমি আমরা পারিবারিকভাবে ডায়াবেটিক হাসপাতালের নামে দান করেছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগের সময় ওই ১৩ শতাংশ জমিও জোরপূর্বকভাবে আমাদের কাছ থেকে দখলে নেওয়া হয়েছিল। এখন সুযোগ পেয়ে তা ফেরত নিয়েছি।’ তবে, তিনি জমির মালিকানা সংক্রান্ত কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে কখনো সম্পৃক্ত ছিলাম না। তৎকালীন সময়ে আপেল ভাই আমাকে ভয় দেখিয়ে জোর করে তুলে নিয়ে আওয়ামী লীগের পদ দিয়েছেন। ওই পদের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেই জড়িত।’
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক এবং ডায়াবেটিক হাসপাতালের সভাপতি ডা. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, ‘ডায়াবেটিক হাসপাতালের জমি দখলের বিষয়ে আমি অবগত নই। যদি কেউ এমন কোনো কাজ করে থাকে, তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এলাকাবাসী দাবি করেছেন, দ্রুত জমি দখলমুক্ত করে ক্লাবের নামে ফিরিয়ে দেওয়া হোক এবং প্রয়োজনে ক্লাবের নতুন কমিটি গঠন করে তা পরিচালনার ব্যবস্থা নেওয়া হোক।