বিমান থেকে বোমা ফেলা ছাড়াও গাজা ভূখণ্ডে দাঁড়িয়ে নিরীহ গাজাবাসীর বুক ঝাঁঝরা করে দেয়ার এক পৈশাচিক খেলায় মেতে আছে ইসরাইল। ৬০ দিনের সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির বিষয়ে গাজার স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার পরও চলছে এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। রোববারও খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষুধার্ত মানুষসহ বহু অসহায় মানুষকে হত্যা করেছে নেতানিয়াহু বাহিনী।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২৭ মে থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল সমর্থিত সংস্থা জিএইচএফ পরিচালিত স্থানে ত্রাণ নিতে গিয়ে হত্যার শিকার হয়েছেন প্রায় সাড়ে ৭০০ ফিলিস্তিনি। এ অবস্থায় ব্রাজিলে চলমান ব্রিকস সম্মেলনের প্রথম দিন, গাজায় নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিসহ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের সব জায়গা থেকে অবিলম্বে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন জোটের নেতারা। ১০টি উন্নয়নশীল দেশের জোট ব্রিকসের যৌথ বিবৃতিকে স্বাগতও জানিয়েছে হামাস।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে সবার চোখ এখন ওয়াশিংটনে। যেখানে তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আজ সাক্ষাতের কথা রয়েছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর। জিম্মিদের মুক্তি এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে এবারের বৈঠক ফলপ্রসু হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন নেতানিয়াহু। এছাড়া চুক্তি বাস্তবায়নে কাতারে ইসরাইলি প্রতিনিধিরা আবারও কাজ শুরু করেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘এখন পর্যন্ত, আমরা ২৫৫ জিম্মির মধ্যে ২০৫ জনকে মুক্ত করেছি। যার মধ্যে ১৪৮ জন জীবিত। এছাড়া ২০ জীবিত জিম্মি এবং ৩০ মৃত এখনও গাজায় রয়ে গেছে। তাদের সকলকে ফিরিয়ে আনতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এছাড়া গাজা আর কখনোই ইসরাইলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে না তাও নিশ্চিত করতে চাই।’
যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে কাতারের দোহায় ইসরাইল ও হামাস প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রথম দফার আলোচনাও হয়েছে। তবে সাড়ে তিন ঘণ্টার ওই আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় সোমবার আবারও আলোচনা হতে পারে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা।
এতে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও জানালেন, চলতি সপ্তাহেই যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি গাজা ইস্যুতে আমরা একটি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। আমরা এই সপ্তাহেই এটি করতে পারি।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প-নেতানিয়াহু সাক্ষাতের মধ্য দিয়েই আসতে পারে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মোনা ইয়াকুবিয়ান বলেন, ‘আমার মনে হয় আলোচনার তালিকায় বেশ কয়েকটি বিষয় থাকবে। তবে গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়টি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বেশ কয়েকদিন ধরেই এই ইঙ্গিত দিচ্ছেন। এমনকি বৈঠকের সময় অথবা কিছুক্ষণ পরেই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসতে পারে।’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরাইলি হামলায় প্রাণহানি ৫৭ হাজার ৪শ' ছাড়িয়েছে। এছাড়া গাজা উপত্যকাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করায় বাস্তুচ্যুত ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি।