যাদের মধ্যে ৭৭ জনই নিহত হয়েছেন ত্রাণ সহায়তা আনতে গিয়ে। আর ক্ষুধা আর অপুষ্টিতে ভুগে মারা গেছেন আরও ৭ জন। এ নিয়ে যুদ্ধ শুরুর পর উপত্যকাটিতে না খেয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৫৪ জনের। এছাড়াও উপত্যকাটিতে প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম ত্রাণ প্রবেশ করছে বলে আবারও অভিযোগ জাতিসংঘের।
ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের পর এবার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে কানাডা। বুধবার (৩১ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি। তিনি জানান, এ বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চায় কানাডা। এছাড়া ফিলিস্তিন রাষ্ট্র পুনর্গঠনে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে ১ কোটি ডলার সহায়তা দেয়ারও ঘোষণা দেন মার্ক কার্নি।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেন, ‘জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চায় কানাডা। ২০২৬ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে ফিলিস্তিনের পুনর্গঠনের কথা জানান মাহমুদ আব্বাস। যেখানে হামাসের কোন ভূমিকা থাকবে না। ফিলিস্তিনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ও সেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রতিষ্ঠায় কানাডা কাজ করবে।’
আরও পড়ুন:
এর মধ্য দিয়ে ন্যাটোভূক্ত আরও ৩টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই সংস্থাটির মোট ১৪টি দেশ রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
কানাডা সরকারের এ পদক্ষেপকে প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরাইল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেয়া এক বার্তায় ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার মধ্য দিয়ে হামাসের কর্মকাণ্ডকে পুরস্কৃত করছে কানাডা। ইসরাইলের সঙ্গে সুর মিলিয়ে একই কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল কানাডার এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেও ফ্রান্সসহ মোট ১৫টি দেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশকে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার আহ্বান জানান। বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ কথা জানান ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ নোয়েল ব্যারোঁ।
যার মধ্যে কানাডা ছাড়াও রয়েছে- অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পর্তুগাল, স্পেন, স্লোভেনিয়া, সান মারিনো, অ্যান্ডোরা।
এদিকে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলনের পর ১৫টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ ইস্যুতে এক যৌথ বিবৃতি দেন। যেখানে বলা হয়, তাদের লক্ষ্য ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানকে পুনরুজ্জীবিত করা।
এদিকে গাজায় অব্যাহত রয়েছে ইসরাইলের ত্রাণ বিতরণ। ইসরাইলের পাশাপাশি মিশরও বিমান থেকে প্যারাসুটে করে সহায়তা ফেলছে ফিলিস্তিনিদের জন্য।
তবে সাহায্য কুঁড়াতে যাওয়া অসহায় ফিলিস্তিনিদের ওপরও চলছে ইসরাইলের নির্মমতা। গাজার উত্তরাঞ্চলের যিকিম ক্রসিং পয়েন্ট ও খান ইউনুস শহরের তথাকথিত মোরাগ করিডরের কাছে ত্রাণের ট্রাক প্রবেশ করেছে খবর পেয়ে ফিলিস্তিনিরা ছুঁটে গেলে তাদের ওপর হামলা চালায় ইসরাইলি সেনারা। এতে অনেক ফিলিস্তিনির নিহত হন।
ইসরাইলি হামলার পাশাপাশি অপুষ্টিতে ভুগেও অনেকে মারা যাচ্ছেন গাজায়। উপত্যকাটির স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহে খাবারের অভাবে ৮৯ শিশুসহ মৃত্যু হয়েছে ১৫৪ জনের।
এ পরিস্থিতিতে, গাজায় যে পরিমাণ ত্রাণ ঢুকছে তা প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ। দিনে গড়ে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ ট্রাক মানবিক সহায়তা দরকার বলে জানায় সংস্থাটি। যেখানে গত চার দিনে প্রবেশ করেছে মাত্র ২৬৯ ট্রাক সহায়তা। যার বেশিরভাগই লুট হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ আল-জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজম। এ অবস্থায় গাজায় ত্রাণ বিতরণে বড় পরিবর্তন না আনলে দুর্ভিক্ষ নিশ্চিত বলে মত বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বা ডব্লিউএফপির কর্মকর্তাদের।
ডব্লিউএফপিয়ের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিচালক জিন মার্টিন বাউয়ার বলেন, ‘গাজায় যে খাবারের অভাব চলছে এই পরিস্থিতির যদি সমাধান হয় তাহলে হয়তো দুর্ভিক্ষ ঠেকানো যাবে। আর যদি তা না করা যায়, গাজার বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে।’
ইরসাইলি সেনাদের হাতে যখন নির্বিচারে শত শত ফিলিস্তিনির প্রাণহানি হচ্ছে, তখন দেশটিতে অস্ত্র সরবারহ বন্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। মার্কিন কংগ্রেসের এক অধিবেশনে এ আহ্বান জানান তিনি।
মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বলেন, ‘হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ শুরুর পর ইসরাইলকে ২২ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যা গাজার বিরুদ্ধে ইসরাইলের সামরিক ব্যয়ের মোট ৭০ শতাংশ। এর অর্থ দাড়াচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা গাজার অনাহারে থাকা শিশু ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা করতে সহায়তা করছে।’
মার্কিন কংগ্রসে উত্থাপিত এই আইনপ্রনেতার প্রস্তাবের পক্ষে ৫১ ডেমোক্যাট ভোট দেন। তবে সব রিপাবলিকানরাই এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।
এদিকে, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করতে ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চল সীমান্তে বিক্ষোভ করেছে খোদ অঞ্চলটির ডানপন্থি নেতারা। সেসময় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করেন তারা।