পুতিন উপস্থিত হলেই কেবল আলোচনায় বসবেন জেলেনস্কি

ভলোদিমির জেলেনস্কি
ইউরোপ
বিদেশে এখন
0

তুরস্কে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার, ১৫ মে) পুতিন উপস্থিত থাকলেই কেবল শান্তি আলোচনায় বসতে রাজি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। যদিও ক্রেমলিন জানিয়েছে উপযুক্ত পরিবেশ পেলেই শান্তি আলোচনায় যোগ দেবেন পুতিন। এদিকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হলে রাশিয়ার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে ইউরোপ।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেয়া ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পুরোপুরিভাবে উপেক্ষা করেছে রাশিয়া। এমনকি সাময়িক যুদ্ধবিরতির মধ্যেও রাশিয়া হামলা অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানায়, গতকাল (মঙ্গলবার, ১৩ মে) একদিনেই রুশ বাহিনীর সঙ্গে ১৩৩টি সম্মুখযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে। এছাড়াও দোনেৎস্ক ও কুরস্ক অঞ্চলে অব্যাহত রয়েছে তীব্র লড়াই। এদিকে মস্কোর অভিযোগ, এক মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়ে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে কিয়েভ।

এমন অবস্থায় শান্তি আলোচনার জন্য তুরস্কের ইস্তাম্বুলে আগামী বৃহস্পতিবার সরাসরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। এতে অংশ নিতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। গেল সপ্তাহে ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপরই ট্রাম্পের অনুরোধে প্রস্তাব গ্রহণ করেন জেলেনস্কি। আবারও ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় শান্তির পথ খুঁজছে দুই দেশ।

এদিকে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলছেন, বৈঠকে পুতিন সরাসরি উপস্থিত না থাকলে শান্তি আলোচনায় তিনি অংশ নেবেন না। আর বৈঠকের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা। তার মতে, ট্রাম্পের বোঝা উচিত শান্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন পুতিন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘পুতিন যদি বৈঠকে উপস্থিত না থাকেন তবে এটি হবে রাশিয়ার চূড়ান্ত ব্যর্থতা। এটি প্রমাণ করবে, যুদ্ধ শেষ করতে মস্কো প্রস্তুত নয়। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও অন্যান্য দেশের নেতাদের নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে। দুই পক্ষের উত্তেজনা কমাতে রাশিয়াকে আর কোনো সুযোগ দেয়া হবে না।’

এদিকে ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব কে করবেন তা এখনও নিশ্চিত নয়। ক্রেমলিন জানিয়েছে, কেবল উপযুক্ত পরিবেশ মনে হলেই আলোচনায় যোগ দেবেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার তুরস্কে অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনার জন্য রাশিয়া প্রস্তুত। এখন পর্যন্ত এটুকুই আমরা বলতে পারি। এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি না।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কাজা ক্যালাসের দাবি, ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসতে ভয় পাচ্ছে রাশিয়া। তার মতে, শান্তি প্রতিষ্ঠায় মস্কো আগ্রহী হলেও, জেলেনস্কির মুখোমুখি হওয়ার সাহস পাচ্ছেন না পুতিন।

২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়ার ওপর ১৬ দফা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এবার তুরস্কের শান্তি আলোচনায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর না হলে মস্কোর বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইউরোপীয় নেতারা। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন যুদ্ধবিরতিতে আসতে পুতিন ব্যর্থ হলে রাশিয়ার আর্থিক পরিষেবাসহ তেল ও গ্যাস খাত নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়বে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব রাশিয়া বারবার প্রত্যাখ্যান করছে। তুরস্কে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তারা শর্ত জুড়ে দিতে চায়। আমার মতে, আমরা এখন কোন পর্যায়ে আছি তা বুঝতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার। যুদ্ধবিরতি মানা না হলে, আবারও ইউরোপের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়বে রাশিয়া।’

২০১৯ সালের পর সরাসরি সাক্ষাৎ হয়নি পুতিন ও জেলেনস্কির। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত শুরু হয় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। যা তিন বছরেও সমাধানের পথ পায়নি। এবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধ বন্ধে আশার আলো জাগাচ্ছে।

এসএস