ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু মূলত যুদ্ধবাজ নেতা হিসেবে আলোচিত-সমালোচিত হলেও, কূটনীতির জটিল খেলায় হেভি ওয়েট নেতাদের টেক্কা দিতে পারেন এই রাষ্ট্রপ্রধান। একদিকে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা করে গাজায় ফিলিস্তিনের আগ্রাসনের ওপর থেকে নজর সরাচ্ছেন বিশ্বের। ধামাচাপা দিচ্ছেন জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তার প্রশাসনের ব্যর্থতাও। অন্যদিকে, ইসরাইলে নেতানিয়াহুর পতনের দাবিতে যে সরকারবিরোধী আন্দোলন, চলমান সংঘাতে বাধা পড়েছে তাও।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ জিইয়ে রাখা ছাড়া আর কোনো পলায়ন সূত্র নেই ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর হাতে। নিজ দেশে দুর্নীতির মামলা আর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের পরোয়ানা থাকায় সেফ এক্সিটও খোলা নেই নেতানিয়াহুর সামনে।
চলতি মাসে সাত দিনেরও কম সময়ের ব্যবধানে দুইবার অনাস্থা ভোটের কারণে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের মুখোমুখি হয়েছিলেন নেতানিয়াহু। সবশেষ ভোটাভুটি হয় ইরানের ভূখণ্ডে ইসরাইলি হামলা শুরুর ঠিক আগেরদিন বৃহস্পতিবার। ১১ ঘণ্টা আলোচনার পর নেতানিয়াহু অতি-ডানপন্থী নেতাদের সঙ্গে চুক্তি করতে রাজি না হলে সেদিনই ভেঙে যেতো ইসরাইলি পার্লামেন্ট। ডাকা হতো নির্বাচন। কিন্তু তারপর দিনই ইরান-ইসরাইল পাল্টাপাল্টি সংঘাতের জেরে আবারও রাজনৈতিক ঐক্য ফিরেছে দেশটিতে।
সবশেষ গেল সোমবার দেশটিতে বসবাসরত ফিলিস্তিনি নাগরিকদের নেতৃত্বাধীন দলগুলো আবারও নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনলে তা আমলে নেয়নি কোনো দলই।
আল জাজিরার বিশ্লেষণ বলছে, ইসরাইলে আচমকাই পাল্টে গেছে মূলধারার রাজনীতি। জনসমর্থন থাকলেও যুদ্ধের কারণে নেতানিয়াহুকে বাগে আনতে পারেনি বিরোধীরা। উল্টো দুই দশক ধরে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর যে তীব্র বাসনা প্রকাশ করে আসছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী- সেই যুদ্ধ দিয়েই সরকার বিরোধীদের দমাতে শুরু করেছেন নেতানিয়াহু।
অথচ গেল সপ্তাহে এই পরিস্থিতি ছিল পুরো উল্টো। গাজায় বিরতিহীন অভিযান ও আগ্রাসনের জেরে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার পাশাপাশি নানা দিক থেকে চাপের মধ্যে ছিলেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী ও তার জোটের নেতারা। গাজায় নিয়োজিত সেনাসদস্য- এমনকি ইসরাইলি সাধারণ মানুষ সবার মধ্যেই ভর করেছিল অজানা এক অনিশ্চয়তা।
অথচ ইরানের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে সে অনিশ্চয়তাকে আত্মবিশ্বাস বানিয়ে ছেড়েছেন নেতানিয়াহু। সোমবার দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যম চ্যানেল ফরটিন এর একটি জরিপে প্রচার করা হচ্ছে ইরানের সঙ্গে সংঘাতে জড়ানোর পর অপ্রতিরোধ্য জনসমর্থন আদায় করে নিয়েছেন নেতানিয়াহু। এমনকি পত্রিকার বিশেষ সম্পাদকীয় ও সংবাদ সম্প্রচারেও নেতানিয়াহুর প্রতি সমর্থন আদায়ে মরিয়া দেশটির প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলো।