ইরান-ইসরাইল আবারও সংঘাতে জড়াতে পারে, ট্রাম্পের শঙ্কা

ডোনাল্ড ট্রাম্প, জেডি ভ্যান্স, মার্কো রুবিও এবং পিট হেগসেথ
মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে শিগগিরই আবারও সংঘাতে জড়াতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর ইরানের বিপ্লবী গার্ড বলছে, তাদের সেনারা বন্দুকের ট্রিগারে আঙুল দিয়ে রেখেছে। এদিকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠোর মন্তব্য করার একদিন পরই নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়ালেন ট্রাম্প। সংঘাতে ইরানকে জয়ী দাবি করে সমাবেশ করেছে হিজবুল্লাহ। যুদ্ধবিরতির পর ইতিবাচক ধারায় মার্কিন শেয়ার বাজার।

ইরান ও ইসরাইল দুই পক্ষেরই দাবি, তাদের নিজেদের শর্তেই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। পাশাপাশি দুই পক্ষই সংঘাতে নিজেদের জয়ী বলছে। তৃতীয় পক্ষ হিসেবে সংঘাতে জড়িয়ে পড়া যুক্তরাষ্ট্রও যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব নিতে মরিয়া। মূলত ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এবং হুমকির পরই উত্তেজনা কমতে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যে।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই যুদ্ধবিরতি ভঙ্গুর। কারণ ইরান ও ইসরাইল যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেও, তাদের মধ্যে শান্তিচুক্তি হয়নি। আপাতত সংঘাত থামলেও দুই পক্ষই হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। এর আগে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে উভয় পক্ষই। যা ক্ষুব্ধ করে তুলে ট্রাম্পকে। ইসরাইলের ওপরও ব্যাপক ক্ষোভ ঝাড়েন তিনি।

তবে ঠিক একদিন পরই আবার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে মহান নেতা বলে আখ্যা দেন ট্রাম্প। চলমান দুর্নীতির মামলা থেকে নেতানিয়াহুকে রক্ষার আশ্বাস দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তার মতে, ইসরাইলের এমন নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হাস্যকর। মামলা এবং বিচার প্রক্রিয়া অবিলম্বে বাতিল করা উচিত বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প।

এমন অবস্থায় আবারও বিস্ফোরক মন্তব্য করেন ট্রাম্প। ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে যেকোনো সময় আবারও শুরু হতে পারে সংঘাত।

আরো পড়ুন:

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘ইরান ও ইসরাইল উভয়ই খুব ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। দুই পক্ষই খুব নিষ্ঠুর এবং হিংস্রভাবে লড়াই করেছে। তারা উভয়ই সংঘাত এড়িয়ে শান্তির পথে আসার জন্য পর খুঁজেছিল। তবে তাদের মধ্যে আবারও সংঘাত শুরু হতে পারে। আমার ধারণা হয়তো খুব শিগগিরই সংঘাতে জড়াতে পারে ইরান ও ইসরাইল।’

ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে ট্রাম্প আশ্বস্ত করে বলেন, আগামী সপ্তাহেই পরমাণু ইস্যু নিয়ে ইরানের সঙ্গে ফের আলোচনায় বসতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে চুক্তি নিয়ে খুব একটা আগ্রহী না ওয়াশিংটন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘পরবর্তী বৈঠকে হয়তো একটি চুক্তি স্বাক্ষর হবে। তবে এটি আমার কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। তারা যুদ্ধ শেষ করে আপন জগতে ফিরে গেছে। এখন পরমাণু ইস্যুতে চুক্তি নিয়ে পরোয়া করছে না যুক্তরাষ্ট্র। আমাদের একটাই চাওয়া ইরানের কোনও পারমাণবিক অস্ত্র থাকবে না। এরইমধ্যে তাদের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।’

এদিকে ইরানের বিপ্লবী গার্ড কমান্ডার জেনারেল মোহাম্মদ পাকপুর শত্রুপক্ষকে সতর্ক করে বলেন, কেউ যদি ভুলেও ইরানকে লক্ষ্যবস্তু বানায়, তাহলে তাদের শক্ত জবাব দেয়া হবে।

জেনারেল মোহাম্মদ পাকপুর বলেন, ‘আমাদের সব সেনা ও যোদ্ধারা প্রস্তুত আছে। তাদের আঙুল বন্দুকের ট্রিগারে রাখা। শত্রুপক্ষ ভুল করে হামলা চালালেও কড়া জবাব দেয়া হবে। গেল ১২ দিনের সংঘাতে এর অনেকটাই টের পেয়েছে ইসরাইল। ইরানকে রক্ষায় এক মুহূর্তের জন্যও দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগবে না সেনারা।’

এদিকে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইরানি দূতাবাসের কাছে সমাবেশ করে হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর সমর্থকরা। ১২ দিনের সংঘাতে ইরানের জয় দাবি করে উদযাপন করে তারা।

হিজবুল্লাহর সমর্থকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘ইরান গত ৪০ বছর ধরে আমাদের পাশে থেকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। অন্যায়, অত্যাচার, দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। তাদের প্রতি আনুগত্য একবিন্দু কমেনি।’

অন্য একজন বলেন, ‘আমরা ইরানি জনগণের পাশে আছি। আলী খামেনিকে সৃষ্টিকর্তা আরও শক্তিশালী করুক এই কামনা করি। ইসরাইল ও তার সমর্থকদের ধ্বংস হোক।’

যুদ্ধবিরতির পর কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে মার্কিন শেয়ারবাজারে। নাসদাক ও এস অ্যান্ড পি ফাইভ হান্ড্রেডের শেয়ারদর বেড়েছে যথাক্রমে শূন্য দশমিক ৩৩ এবং শূন্য দশমিক দুই শতাংশ। এনভিডিয়ার বাজার মূল্য রেকর্ড ৩ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। যার মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়েছে এনভিডিয়া।

এসএস