বাণিজ্যিক সুবিধা পেতেই কি যুদ্ধ বন্ধে ছুটছেন ট্রাম্প?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
0

শান্তির দূত হয়ে ঘুরছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের সব যুদ্ধ বন্ধ করাই যেন তার এক মাত্র উদ্দেশ্য। তবে তার এ উদ্দেশের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অন্যতম ফ্যাক্টর হয়ে কাজ করছে। যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্য এসে, এখান থেকে ২ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ কুঁড়োনো যার অন্যতম উদাহরণ। এছাড়া পাক-ভারত যুদ্ধবিরতির পেছনেও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের ইস্যুটি নিজেই সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন ট্রাম্প।

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর পর ট্রাম্পের যে মারমুখী চেহারা দেখা যায়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩৬০ ডিগ্রিতে তা পরিবর্তন হয়ে গেছে। যুদ্ধবাজ ট্রাম্প এখন শান্তির পায়রা হয়ে কাজ করছেন। যার অনন্য উদাহরণ গেল সপ্তাহে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে ট্রাম্পের প্রত্যক্ষ অবদান। তার কথাতেই যুদ্ধ বন্ধে রাজি হয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ।

ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতির পর হামাস-ইসরাইল ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে একাগ্র চিত্তে কাজ করে যাচ্ছেন ট্রাম্প। গাজায় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে মধ্যপ্রাচ্য চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গেও করেছেন একাধিক বৈঠক।

এছাড়াও, তার এ সফরে সৌদি আরবের রিয়াদে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান আহমেদ আল সারার সঙ্গে ঐতিহাসিক বৈঠক করেন ট্রাম্প। সিরিয়ার ওপর থেকে উঠিয়ে নেন নিষেধাজ্ঞা। সিরিয়ার বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষুধা ও দরিদ্রতার হাত থেকে রক্ষা করতেই ট্রাম্পের এ পদক্ষেপ বলে জানায় ওয়াশিংটন।

তবে ঠিক কী কারণে হঠাৎ ট্রাম্প যুদ্ধের পরিবর্তে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত হলেন? এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনা হলেও, প্রকৃতপক্ষে এ অঞ্চলের ধনী দেশগুলো থেকে বিনিয়োগ কুঁড়িয়ে বাণিজ্য সম্প্রসারণের পথেই হাঁটছেন তিনি। এরইমধ্যে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে কাছ থেকে ২ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরে মিত্রপক্ষ ইসরাইলকে বাইপাস করে এ অঞ্চলের ধনী দেশগুলোকে গুরুত্ব দেয়ার অন্যতম কারণ- ইসরাইলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোন বাণিজ্যিক সম্পর্ক না থাকা। এমনকি ইয়েমেনে হুথি হামলা বন্ধের বিষয়েও তেল আবিবকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবগত করেনি ওয়াশিংটন। সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-সারার সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক ও সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ার বিষয়েও ইসরাইল কিছুই জানতো না।

এদিকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির পেছনেও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য। যুদ্ধবিরতির পর এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যেতে হলে দুই দেশকেই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে হবে। এবং তার প্রস্তাবে রাজি হয় নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ।

যুদ্ধ বন্ধের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্য সম্প্রসারণের উদ্দেশ্য থাকলেও তার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড দেখে নোবেল শান্তি পুরস্কারের ইস্যুটিও ঘুরে ফিরে উঠে আসছে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোতে।

এএইচ