ইসরাইলি আগ্রাসনের মধ্যেই মোসাদ নিয়ে হুলস্থুল চলছে ইরানে। ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেভাবে তাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে, তাতে গুপ্তচর আতঙ্কে তটস্থ ইরানের সাধারণ মানুষ। মাস্ক, টুপি বা সানগ্লাস পরা কাউকে দেখলেই ধরে নিচ্ছেন ইসরাইলি গুপ্তচর।
ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর সমর্থনে লেখা প্রচারের অভিযোগেও ইরানজুড়ে চলছে ধরপাকড়। মধ্যাঞ্চলীয় ইস্পাহান শহর, যেখানে একটি পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলার দাবি করেছে ইসরাইল। সেখানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অর্ধশতাধিক মানুষকে। ইসরাইলি গুপ্তচরদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চলছে তেহরানেও।
ইসরাইলের নজিরবিহীন আক্রমণের নেপথ্যে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ছদ্মবেশী সদস্যদের ইরানে অস্ত্রপাচার এবং এসব অস্ত্র ভেতর থেকেই হামলায় ব্যবহারের খবরে বিচলিত তেহরান।
এর মধ্যেই রাজধানীর বুকে শনাক্ত হয়েছে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম মোসাদের কাস্টোমাইজড স্পাইক মিসাইল।
ইরানি গোয়েন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, ফায়ার অ্যান্ড ফরগেট অ্যান্টি ট্যাঙ্ক গাইডেন মিসাইল বা সংক্ষেপে এটিজিএম-ধর্মী স্পাইক মিসাইল লঞ্চার রিমোট কন্ট্রোলড সিস্টেমে পরিচালিত এবং এতে রয়েছে ইন্টারনেটভিত্তিক স্বয়ংক্রিয়। এসব ক্ষেপণাস্ত্র একবার ছোড়ার পর লক্ষ্যে আঘাত হানতে দ্বিতীয় কোনো নির্দেশনার প্রয়োজন পড়ে না।
এখানেই শেষ নয়, তেহরানে মোসাদ পরিচালিত একটি ড্রোননির্মাণ কারখানা শনাক্তেরও দাবি করেছে ইরান প্রশাসন। তেহরান ও আলবোর্জ প্রদেশে আলাদা অভিযানে মোসাদের হয়ে কাজ করা দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার, ২০০ কেজির বেশি বিস্ফোরক, ২৩টি আত্মঘাতী ড্রোন, মিসাইল লঞ্চার, যানবাহন ও অন্যান্য কারিগরি যন্ত্রাংশ জব্দ করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার দুই ব্যক্তি বোমা, বিস্ফোরক, বুবি ট্র্যাপ আর নাশকতামূলক বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি তৈরি করতেন একটি বাড়িতে।
বলা হচ্ছে, ইরানের ভেতর থেকে দেশটিতে নাশকতার অভিযান সফল করতে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বিস্ফোরকভর্তি ছোট ছোট ড্রোন লুকিয়ে রেখেছিল ইসরাইলি গুপ্তচর ও ইরানের রাষ্ট্রদ্রোহীরা।
এ তথ্য স্বীকার করেছে ইসরাইলি কর্মকর্তারাও। জানায়, ইরানের ভেতরে পাচার করা অস্ত্র ব্যবহার করে ইরানের সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেমে প্রথমে আঘাত হানে ইসরাইল।
এর মাধ্যমে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে একরকম অচল করে দিয়ে স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৩ জুন) মধ্যরাতে ২ শ’র বেশি বোমারু বিমান ব্যবহার করে একযোগে শতাধিক হামলা চালায় ইসরাইলি বিমান বাহিনী।
এমন পরিস্থিতিতে ইসরাইলি গুপ্তচর ও তাদের সহযোগীদের শনাক্তে জনসাধারণের জন্য নির্দেশনা জারি করেছে ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়।
এতে মাস্ক, গগলস বা টুপি পরিহিত, ট্রাকচালক, সামরিক বা শিল্প ও আবাসিক এলাকার আশপাশে বড় ব্যাগ বহন করা বা ছবি ও ভিডিও ধারণকারী অচেনা ব্যক্তিদের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলা হয়।
কুরিয়ারের মাধ্যমে কাউকে ঘন ঘন পণ্য আনা-নেয়া করতে দেখা গেলে, কোনো স্থাপনার ভেতর থেকে অস্বাভাবিক আওয়াজ শোনা গেলে, দিনরাত পর্দা দিয়ে কোনো বাড়ি ঢাকা থাকলে প্রশাসনকে সে বিষয়ে অবহিত করারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।